সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। আজ রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৪টা নাগাদ ফুজাইরা উপকূল এবং হরমুজ প্রণালি হয়ে আমিরাতের বহির্নোঙরে পৌঁছে। কেএসআরমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোববার বিকালে আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছানোর পরের দিন সোমবার কয়লা খালাসের জন্য জাহাজটিকে জেটিতে ভিড়ানো হবে। জাহাজটি ভেড়ার পর আল হারামিয়া বন্দরে চার থেকে পাঁচদিন অবস্থান করবে। তবে সংশ্লিষ্ট বন্দরের বার্থিং শিডিউল অনুযায়ী জাহাজজট কিংবা অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে বার্থিংয়ে ২৪ থেকে ৩২ ঘণ্টা দেরি হতে পারে।
এদিকে জাহাজ থেকে দুই জন নাবিক বিমানে করে দেশে ফিরবেন। বাকি ২১ জন নাবিক এমভি আবদুল্লাহ জাহাজযোগে দেশে ফিরবেন। সেক্ষেত্রে তাদের সময় লাগবে ২৫ থেকে ২৬ দিন। নাবিকদের নিজ নিজ ইচ্ছায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নাবিকেরা হলেন—জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
এদিকে মুক্তি পাওয়া জাহাজের ক্যাপ্টেনসহ ২৩ নাবিককে বরণ করা, দেশে আনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে জাহাজ মালিকপক্ষের একটি দল গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) দুবাইয়ে গেছে।
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে। দেশটির উপকূল থেকে ৫৭৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি ছিনতাই করা হয়। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা প্রথম মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণের দাবি জানায়। এরপর শুরু হয় দর-কষাকষি।
পরে ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ৩১ দিন পর, অর্থাৎ ৩২ দিনের জিম্মিদশা থেকে গত ১৩ এপ্রিল শনিবার দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। মুক্ত হওয়ার পরই ১ হাজার ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে থাকা আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি। জাহাজটিতে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে।
এসময় জাহাজটিকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধজাহাজ ও তিনটি টহল জাহাজ ঝুঁকিপূর্ণ জলসীমা পার করে দেয়। এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণি।