কারো সাথে যুদ্ধ নয় সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ। তবে যেকোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এর জন্য জীবন বাজি রেখে যা যা করণীয় তা করতে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (এপ্রিল ২১) চট্টগ্রামের হালিশহর সেনানিবাসে আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলে নবনির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে আয়োজিত দরবারে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমরে আমরা শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা, দেশের তরে’- এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আমাদের সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম, পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হব।
নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থাশীল ও অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে তাদের গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে হতে হবে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন-স্মার্ট।
চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আজ ধারাবাহিক গণতন্ত্র রয়েছে বলেই, বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে এবং বিশ্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য।
চট্টগ্রামের হালিশহর সেনানিবাসে আর্টিলারি সেন্টারের প্রশংসা করে সরকার প্রধান বলেন, আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল গোলন্দাজ বাহিনী তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ঐতিহ্যবাহী ও সুপ্রসিদ্ধ প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এ প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে প্রতি বছর রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনাসদস্য বিভিন্ন প্রকার মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
তিনি বলেন, দেশীয় সেনাসদস্য ছাড়াও এখানে বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র যেমন ভারত, কুয়েত, সুদান, মালয়েশিয়া, তানজানিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, নাইজেরিয়াসহ ১২টিরও অধিক দেশ থেকে অফিসাররা উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। তাই, আপনাদের ওপর অর্পিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার এই দায়িত্ব অত্যন্ত পবিত্র। সঠিক ও সময়োপোযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের রেজিমেন্ট অব আর্টিলারিকে একটি আরও অত্যাধুনিক এবং কার্যকর বাহিনীতে রূপান্তর করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির আধুনিকায়নে ইতোমধ্যে ফিল্ড আর্টিলারিতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক টাইগার এমএলআরএস, ১৫৫ মিলিমিটার সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি গান নোরা ই-৫২, অত্যাধুনিক ওয়েপন লোকেটিং রাডার এবং সাউন্ড রেঞ্জিং সিস্টেম। পাশাপাশি এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টে সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক অরলিকন গান, শোরাড মিসাইল, ভি শোরাড মিসাইল এবং রাডার কন্ট্রোলড এয়ার ডিফেন্স গান।
সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক বিমান, হেলিকপ্টার, ইউএভি, চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক, আধুনিক এপিসি, ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল ও অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম।
সেনাবাহিনীর কাজের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। কর্মনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রশংসিত। জাতিসংঘ মিশনে আমাদের সৈনিকদের সামর্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সম্প্রতি অত্যাধুনিক লাইট আর্মাড ভেহিক্যাল ও মাইন রেসিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রটেক্টেড ভেহিকেল সংযোজন করা হয়েছে।