ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সায়েম ইমরান ও বিমানবন্দর থানা পুলিশ মরদেহগুলো হস্তান্তর করেন। এরপর কফিনবন্দি লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন স্বজনরা।
যাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হলো- মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার সেনদিয়া গ্রামের সজল বৈরাগী (২২), একই থানার কদমবাড়ি গ্রামের মৃত পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (১৮), সরমঙ্গল গ্রামের মামুন শেখ (২৪), কোদালিয়া গ্রামের কাজী সজীব (১৮), কেশরদিয়া গ্রামের তোতা খলিফার ছেলে কায়সার খলিফা (৩৫), গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর থানার দাদন শেখের ছেলে রিফাত শেখ (২৪), একই থানার পদ্মপট্টি গ্রামের আবুল কাশেম শেখের ছেলে রাসেল শেখ (২৫) এবং পদ্মাপট্টি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইমরুল কায়েস আপন (২৩)।
উন্নত জীবনের আশায় দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন মৃতরা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন ৩৫ বাংলাদেশিসহ ৫৩ জন। নৌকাটি তিউনিসিয়া উপকূলে ডুবে গেলে ওই আট বাংলাদেশিসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল বিমান বন্দরে আসে আট বাংলাদেশির মৃতদেহ।
এই আটজনকে হত্যার অভিযোগে গত ১৯ এপ্রিল সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত সজলের বাবা সুনীল বৈরাগী ।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম মৃতদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন।
মরদেহ বুঝিয়ে দেয়ার সময় এসআই জাহাঙ্গির আলম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ৮টি মরদেহ বিমানবন্দরে আসে। সেখান থেকেই মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, শুক্রবার (৩ মে) ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ফরেনসিক চিকিৎসকের সামনে মরদেহবন্দি কফিন খুলে দেখা যায়, মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তাই নতুন করে ময়নাতদন্ত না করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জাহাঙ্গির আলম জানান, ৭ জনের নাম ও অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করে বিমানবন্দর থানায় হত্যা ও মানব পাচার সংক্রান্ত মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বাইরে অথবা দেশে যারাই জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে জুয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপে যাত্রাপথে ৫২ জন যাত্রী এবং একজন চালকসহ নৌকাটি তিউনিসীয় উপকূলে ডুবে গেলে ৪৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন ২৭ জন বাংলাদেশি, পাকিস্তানের ৮, সিরিয়ার ৫, মিসরের ৪ জন। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশি ও অন্যজন পাকিস্তানের নাগরিক বলে শনাক্ত হয়েছেন।