গাছ লাগানো এবং কাটার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব নীতিমালা তৈরি না করা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা এবং খামখেয়ালিপনাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গাছ লাগানো এবং কাটার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব নীতিমালা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
সোমবার (৬ মে) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ।
এর আগে গতকাল রোববার (৫ মে) পরিবেশ রক্ষায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আরেকটি রিট দায়ের করা হয়েছে।
সম্প্রতি তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়ার মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে মর্মে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট দায়ের করা হয়।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে এ রিট পিটিশন দায়ের করে। এইচআরপিবির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ রিট দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশে তাপপ্রবাহ চলেছে। এ কারণে জনজীবনে চরম অস্বস্তি তৈরি হয়। বিপাকে পড়েন শ্রমজীবীরা। ব্যাহত হয় শিক্ষা কার্যক্রম।
গত কয়েক দিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে। তবে এখনো দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপ প্রবাহ বয়ে চলছে। দেশের ইতিহাসে এমন দীর্ঘ তাপপ্রবাহে প্রাসঙ্গিকভাবেই আলোচনায় আসে জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন, বনায়ন, নগরায়ণ, গাছ কাটা ও গাছ লাগানোর মতো বিষয়। গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর-প্রতিবদেন হয়েছে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেত বলেন, তাপপ্রবাহের মধ্যে গাছ কাটা বা রোপণ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদনটি করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছ-গাছালি থাকা দরকার তা দিন দিন কমছে। চলমান তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন-যাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে নির্বিচারে গাছ কাটার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর। নির্বিচার গাছ কাটা বন্ধ না হলে দেশে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
রিটে যেসব নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল ঢাকা শহরে গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতি এ নির্দেশনা চেয়েছেন রিট আবেদনকারী।
সেই সঙ্গে জেলা পর্যায়ে গাছ কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে কমিটি গঠন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এই কমিটিতে পরিবেশ কর্মকর্তা, সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক ও সিভিল সার্জনকে রেখে সাত দিনের মধ্যে এ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিতে আরজি জানানো হয়েছে।
স্থানীয় পর্যায়ে কমিটির অনুমতি ছাড়া যাতে কেউ গাছ কাটতে না পারে, সে নির্দেশনা দিতেও আরজি জানানো হয়েছে রিট আবেদনে। এসব নির্দেশনা দিলে তা দুই সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, ঢাকা ও দেশের জেলা-উপজেলা শহরে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ২০০৪ সালের সামাজিক বনায়ন বিধিমালা অনুসারে চুক্তিভুক্ত পক্ষকে অর্থায়ন করার বিধান যুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, মর্মে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে রিটে।
এতে মন্ত্রীপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, পরিবেশ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান বন সংরক্ষক এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে।