অস্ত্র আইনের মামলায় খালাসের তিন মাসের মাথায় অবৈধ সোনা ও পাচারের উদ্দেশ্যে বিপুল দেশি-বিদেশি মুদ্রা নিজ হেফাজতে রাখার মামলায় মো. মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রোববার (৫ মে) ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার এ রায় দেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মাহবুবুর রহমান বলেন, মামলার সাক্ষীরা (পুলিশ) একেকজন একেক ধরনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। পিবিআইয়ের সাক্ষ্যের সঙ্গে সিআইডির সাক্ষ্যের কোনো মিল ছিল না। সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে মিল না থাকায় গোল্ডেন মনিরকে খালান দেওয়া হয়েছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেবো আপিল করবো কি না।
২০২০ সালের ২২ নভেম্বর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (বি) ধারায় মামলাটি দায়ের করেছিল র্যাব। এরপর তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০২১ সালের ১২ জুলাই মামলার চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি) আব্দুল মালেক।
চার্জশিটে বলা হয়, অভিযুক্ত মনির হোসেন সাড়ে সাত কেজি অবৈধ সোনা, ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা পাচারের উদ্দেশ্য নিজ হেফাজতে রেখেছেন। উদ্ধার হওয়া সোনা কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে দেশে আনা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আদালত রায় পর্যালোচনায় বলেন, চার্জশিটের ১০ থেকে ১৪ নম্বর সাক্ষীরা ঘটনাস্থল (গোল্ডেন মনিরের বাড়ি) থেকে আলামত উদ্ধার হতে দেখেননি। তারা সকলেই র্যারের চাপাচাপিতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। অর্থাৎ নিরপেক্ষ পাঁচজন সাক্ষীই রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যকে সমর্থন করেনি। তারা সকলেই জব্দ তালিকার সাক্ষী।
এছাড়াও ঘটনার দিন ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর হলেও ওভাররাইটিং করে পরবর্তীতে এজাহারে ২১ নভেম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। জব্দ তালিকার চারজন নিরপেক্ষ সাক্ষীই বলেছেন ঘটনার তারিখ ২০ নভেম্বর।
রায়ে আরও বলা হয়, জব্দকৃত আলামতসমূহ তথা স্বর্ণালঙ্কার বৈধ আয় দিয়ে খরিদকৃত, যা ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে। এসব মালামালের জন্য তিনি কর প্রদান করে থাকেন।
রায়ে বিচারক আরও উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপক্ষ এবং অভিযুক্তপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং আদালতে উপস্থাপিত দাখিলিক প্রমাণ স্পষ্টতই এজাহার এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যের সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আদালত ধারণা করতে পারে যে, অত্র মামলাটি একটি সৃজিত মামলা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বাড্ডা থানার অস্ত্র মামলা থেকে গোল্ডেন মনির খালাস দেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান।
২০২০ সালের ২০ নভেম্বর দিনগত রাতে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি, বিদেশি মদ ও প্রায় ৯ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। তার বাসা থেকে আট কেজি সোনা ও নগদ এক কোটি ৯ লাখ টাকাও জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর বাড্ডা থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা করে র্যাব।
২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল মালেক অস্ত্র ও মাদক মামলায় গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই বছরের ২৩ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়।
তখন গোল্ডেন মনির নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। অস্ত্র মামলায় অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
র্যাব জানায়, নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর গাউছিয়ায় একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন মনির। সে চাকরি ছেড়ে তিনি ক্রোকারিজের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর লাগেজ ব্যবসা অর্থাৎ ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে মালামাল আনতেন মনির।
একপর্যায়ে তিনি চোরাকারবারিতে জড়িয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা অবৈধপথে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। সে কারণেই তার নাম হয়ে যায় ‘গোল্ডেন মনির’। সোনা চোরাকারবারে জড়ানোর কারণে ২০০৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।