রাজধানী ঢাকায় ৩৫০ সিসির মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালানো কঠিন। এটি মহাসড়কে চালানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মঙ্গলবার (১৪ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ট্রাফিক সেফটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম ও রোড সেফটি স্লোগান প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনারকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন অতিথিরা।
এরমধ্যে আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ডিএমপি কমিশনারের কাছে জানতে চান, ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেল পার্মিড হচ্ছে, অন্যদিকে সড়কে চলাচলে গতি সীমা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৩০ কিলোমিটার। তবে সড়কে চলতে গিয়ে এই গতিতে গাড়ি খেই হারিয়ে ফেলবে। এটা কি সাংঘর্ষিক নয়?
উত্তরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, দুটি কথাই সঠিক। গতি সীমার কথা বলেছে সেটিও ঠিক, আবার সিসির বিষয়ও ঠিক। আইনটি করেছে বিআরটিএ। আর মোটরসাইকেলের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। রাজধানীতে এমন সিসি মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতি সীসার মধ্যে চালানো কঠিন। আমি মনে করি একটি বিষয় হয়তো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা করেছে, সেটি দেখতে চাই হাইওয়েতে। কারণ এই নির্দেশনা মতে রাজধানীতে চালানো কঠিন।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রোবটিক সিস্টেম চালু করা যায় কি না- অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হয়েছে। একটি পরিকল্পনাপত্র পুলিশ সদরদপ্তরে রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও চিন্তা চলছে। রাজধানীতে যদি এটি করতে পারি তবে এআই বেজ সিসি ক্যামেরার ওপর ভিত্তি করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করতে সক্ষম হবো।
সড়কের পাশে যত্রতত্র গাড়ির অবৈধ পার্কিং করে রাখা হয়। এজন্য যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা ডিএমপি নিচ্ছে কি না- আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীতে বিল্ডিং নির্মাণ করতে গেলেই রাজউকের অনুমতি লাগে। সেখানে রাজউকের কিছু শর্ত থাকে, যেমন- কতটুকু জায়গা ছাড়া হবে, পার্কিং লট রাখাসহ নানা শর্ত। কিন্তু দেখা যায়, অধিকাংশই সেগুলো মানছে না। এদিকে আমরা নিজেরাও অনেক অসচেতন, যতটুকু আইন রয়েছে ততটুকু মানছি না। ভবন মালিক, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, আমরা কেউই আইন ঠিকমতো মানছি না। সবার সচেতন হওয়ার দরকার। একটি ভবন নির্মাণ করলে সেখানে পার্কিং রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। নিজের গাড়ি ও তার বাসায় আসা মেহমানের গাড়িটিও যাতে পার্কিং করে রাখা যায়। এতে সড়কে অবৈধ পার্কিং করার প্রয়োজন হয় না।
ডিএমপি আরও কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ জনসংখ্যা, সে অনুযায়ী সড়কে পথচারী ও গাড়ির চাপে মানুষের চাপা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ঢাকা সোনারগাঁও ক্রসিং যদি ধরি, সেখানে তিন লাখ লোক প্রতিদিন পারাপার হয়। যদিও সেখানে আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজ বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং বিশ্বের বিভিন্ন শহরের তুলনায় ঢাকার চিত্র অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি আমাদের শহর ভালো চলছে অন্যান্য দেশের শহরের তুলনায়।
ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমের বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, এটাও সত্য যে রাজধানীতে ১৯১টি ক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে একটি ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বাতি রয়েছে, সেটি হলো গুলশান ক্রসিং। কিন্তু সিগন্যাল বাতি স্থাপন বা লাগানোর বিষয়টি সিটি করপোরেশনের। এটি ট্রাফিকের আওতায় নয়। সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের দায়ভার কতটুকু সেটিও আপনাদের জানা দরকার। সড়কের যানজট ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে চারটি সংস্থা কাজ করে, এরমধ্যে চার ভাগের এক ভাগের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক পুলিশ। শুধু আইন প্রয়োগের কাজটি করা হয়।
তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেবল পুলিশ, সিটি করপোরেশন, পরিবহন মালিক ও চালকের পক্ষে সম্ভব নয়। সবার আন্তরিক হতে হবে। সবাইকে নিয়ম মানতে হবে, তাহলে সবার সহযোগিতায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।
ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণে ফুটপাত থেকে হকার তুলে দিচ্ছি। এজন্য অনেকের ফোন পাই। তারা বলে আপনার কি একটুকুও দয়া-মায়া নেই। এটাও কিন্তু বাস্তবতা। তাদের রাখলে সড়কে শৃঙ্খলা থাকছে না, আবার তুলে দিতে হচ্ছে।
ছাত্রদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি প্রত্যাশা করি আপনারা ট্রাফিক সেফটি সম্পর্কে সচেতন হবেন ও অন্যদের সচেতন করবেন।
তিনি আরও বলেন, জাইকার কারিগরি সহযোগিতায় জাপানে, ভারতে ও দেশে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এখন আমাদের আন্দোলন অসত্য, চাঁদাবাজি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে।
অনুষ্ঠানে ট্রাফিক বিভাগের কার্যক্রম, যানজট নিরসনে ভূমিকা এবং ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ, জাইকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিস ইউমি ওকাজাকি, জাইকার প্রোগ্রাম অফিসার মো. রাইসুল ইসলাম, ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।