রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মঞ্জু শেখ (২৮) নামের এক যুবককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের মামলায় চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া পৃথক ধারায় প্রত্যেককে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সাত হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৫ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র দায়রা জজ মোসাম্মাৎ জাকিয়া পারভিন এ রায় দেন।
এ ছাড়া হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় মো. রুবেল ব্যাপারী নামের এক আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তবে ছিনতাই করা মোটরসাইকেলটি ক্রয় করে লুকিয়ে রাখার অপরাধে ৪১১ ধারায় তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার সোহরাব মন্ডল পাড়ার মো. সুলতান মৃধার ছেলে মো. শাহাদাত মৃধা লাভলু, আব্দুল আজিজ মৃধা পাড়ার মো. বিল্লাল মোল্লার ছেলে মো. মনোয়ার হোসেন মনু, সোহরাব মণ্ডল পাড়ার মো. বাতেন সরদারের ছেলে মো. রিপন সরদার ও মিনাজ উদ্দিন শেখ পাড়ার মো. আক্কাস শেখের ছেলে মো. কোবাদ শেখ। রায়ের সময় মো.শাহাদাৎ মৃধা ছাড়া সবাই উপস্থিত ছিলেন। পলাতক আসামি শাহাদাত মৃধা লাভলুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
নিহত মঞ্জু শেখ গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর দৌলতদিয়া রহমান ফকিরের পাড়ার বাবলু শেখের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। মুসলিমা নামে তার ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মঞ্জু শেখ ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে বাড়ি থেকে জরুরি কাজের কথা বলে মো. মঞ্জু শেখ বের হন। ওই রাতেই মঞ্জুকে হত্যা করে মরদেহ দৌলতদিয়া আক্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে আইনউদ্দিন ব্যাপারীপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীর শাখা খালের পাড়ে ফেলে তার মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরদিন ২৭ অক্টোবর সকালে স্থানীয় কৃষকরা জমিতে কাজ করতে গিয়ে মরদেহটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ২৭ অক্টোবর মঞ্জুর বাবা বাবলু শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে নেমে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ার পর মঞ্জুকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ এ রায় দেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজবাড়ী জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট উজির আলী শেখ বলেন, দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে বিজ্ঞ আদালত আজ এই আদেশ দিয়েছেন। এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে মামলার বাদী ও মঞ্জুর বাবা বাবলু শেখ বলেন, আমার ছেলে হত্যায় আমি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম। আমি উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
আসামিরা ছাড়া পেলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেছেন বাবলু শেখ।