রাজধানীর হাজারীবাগে তানিয়া আক্তার (৩৫) খুনের মামলায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল কুদ্দুসুর রহমানকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার এই সেনা কর্মকর্তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন।
এর আগে গতকাল (বৃহস্পতিবার) তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তার আগে চার মাস তিনি সেনাবাহিনীর হেফাজতে ছিলেন বলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার এসআই মতিউর রহমান রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন। সেনা হেফাজতে থাকার সময় কুদ্দুসুর স্বীকারোক্তি দিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি কুদ্দুসুর রহমান আলামত ধ্বংসের লক্ষে তানিয়ার মোবাইল ফোন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু, তানিয়াকে দেওয়া বিভিন্ন গিফট সামগ্রী, বাসার চাবি আসামির কাঁধে থাকা ব্যাগে ভরেন আসামি। পরে আসামি ঘটনাস্থল রুম এবং ফ্ল্যাটের মূল গেট তালাবদ্ধ করে মুখে মাস্ক পরে এবং মাথায় হুডি পরে দ্রুত ব্যাগ কাঁধে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর সীমান্ত স্কয়ারের নিচে পার্ক করা আসামির ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তার কর্মস্থল রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্টে যাওয়ার সময় আসামির ব্যবহৃত হুডি জ্যাকেট এবং আলামত ভর্তি কাঁধে থাকা ব্যাগটি টঙ্গী ব্রিজের উপর থেকে তুরাগ নদীতে ফেলে দেন বলে বিবৃতি প্রদান করেন। আসামির এই বিবৃতির ভিডিও পুলিশের কাছে আছে বলে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়।
রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, আসামি কুদ্দুসুর রহমানের সঙ্গে তানিয়ার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তানিয়াকে ব্যাংকের মাধ্যমে এবং অন্যান্য মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতেন কুদ্দুসুর রহমান।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসামি কুদ্দুসুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লাতে এবং তানিয়ার স্বামীর বাড়ি কুমিল্লাতে। তানিয়ার স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার সময় রাস্তায় পরিচয় কুদ্দুসুরে সঙ্গে। এরপর দুজনের মধ্যে সখ্য হয়।
গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে ভাড়া বাসায় খুন হন তানিয়া। দুই দিন পর ২১ জানুয়ারি তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তানিয়ার ভাই তন্ময় হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হাজারীবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক শাহিনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
তানিয়ার ভাড়া বাসার আশপাশের বিভিন্ন ক্লোজড সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয় আসামি কুদ্দুসুর রহমানকে। মামলার নথিপত্রে দেওয়া সিসিটিভি ফুটেজের ছবিতে দেখা যায়, ১৯ জানুয়ারি বিকাল ৫টা ৪২ মিনিটে তানিয়া বাসার গলিতে ঢোকেন। দুই হাতে কাপড়ের দুটি থলে এবং কাঁধে ঝোলানো ছিল ভ্যানিটি ব্যাগ। পেছনে কিছুটা দূরত্ব রেখে হাঁটছিলেন কুদ্দুসুর রহমান। তার পরনে ছিল জ্যাকেট, কাঁধে ব্যাগ (ব্যাকপ্যাক) ও মুখে মাস্ক। এর কিছুক্ষণ পরের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ওই বাসা থেকে হুডি পরে বের হচ্ছেন কুদ্দুসুর রহমান, পিঠে ব্যাগ। তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করছেন।
মামলার নথিপত্রে দেওয়া আরও সিসিটিভি ফুটেজের ছবিতে দেখা যায়, ঘটনার দিন বিকালে কুদ্দুসুর ও তানিয়া ধানমন্ডির বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। তখন কুদ্দুসুরের মাস্ক পরা ছিল না। ধানমন্ডি থেকে দুজন রিকশা নিয়ে হাজারীবাগে ঢোকেন। বাসার কাছাকাছি দূরত্বে এসে তারা রিকশা থেকে নেমে যান। এরপর তানিয়ার পেছন পেছন দূরত্ব বজায় রেখে কুদ্দুসুর হাঁটতে থাকেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে হাজারীবাগ থানার ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।