মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব মানুষের মধ্যে যাদের বেশিরভাই ফ্লাইট ধরতে পারছেন না। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমানবন্দরে উৎকণ্ঠিত মানুষের ভিড় দেখা যায়।
কাজের জন্য মালয়েশিয়ার সুযোগ পাওয়া অনেকেই হয়েছেন এজেন্সির প্রতারণার শিকার। কেউ আবার শেষ মুহূর্তে টিকিট পেয়েও যেতে পারেননি। তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের সেদেশে প্রবেশের শেষ দিন ছিল আজ শুক্রবার (৩১ মে)। এ ধাপে কর্মী ভিসায় শুক্রবারের পর আর কেউ সেখানে যেতে পারবেন না।
মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের ভিড় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, দুই দিন ধরে মালয়েশিয়াগামী অনেক যাত্রীর চাপ রয়েছে। বাড়তি এই চাপ সামলাতে নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে, শুক্রবার শেষ দিনে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল মাত্র ১ হাজার ৫০০ জন কর্মীর। তারা কে কোনো ফ্লাইটে, কোন বিমানে যাবেন, তা আগে থেকে ঠিক করা আছে। এর বাইরে আরো ৩১ হাজার ৭০১ জন বাংলাদেশি কর্মী চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ার যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু টিকিট জটিলতায় তারা বিপাকে পড়েছেন।
শুক্রবার সকাল থেকে বিমানবন্দরে আসতে থাকেন বহু লোক। যেসব এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি, তারাই ডেকে এনেছেন তাদের। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমানবন্দরে এসব মানুষের ভিড় দেখা যায়।
বিমানবন্দরে ব্যাগ-ট্রলি, লাগেজ নিয়ে বসে থাকা এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় সাংবাদিকদের। বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে এসেছেন তারা। মালয়েশিয়া যাচ্ছেন- এমন কথা বলেই বাড়ি থেকে বের হন।
খুলনার তেরোখাদা থেকে এসেছেন আল মামুন নামের একজন। সব ঠিক থাকলে সন্ধ্যায় ফ্লাইটে ওঠার কথা ছিল তার। কিন্তু টিকিট আর তার হাতে আসেনি।
মামুন বলেন, বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য মালয়েশিয়া যেতে চাইছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকিট পাইনি। এজেন্সি থেকে এখানে আসতে বলেছিল। বলেছে অপেক্ষা করতে। একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এখন দেখছি অনেক মানুষ এখানে। টিকিট নেই।
নঁওগার আত্রাই থেকে এসেছেন মো. শেরেকুল। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার ইচ্ছায় এসেছিলাম। আমাদেরকে এজেন্সি থেকে বলেছিল টিকিট পাব। সকাল থেকে এখানে এসে বসে আছি। খাওয়া হয়নি। এজেন্সি থেকেও জানিয়েছে টিকিট পাওয়া যায়নি। আমরা প্রতারণার শিকার।
বাংলাদেশ থেকে কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার শেষ সময় শুক্রবার রাত পর্যন্ত। এক মাস আগে থেকে এ তারিখ নির্ধারণ করা ছিল।
বেঁধে দেয়া শেষ তারিখের সুযোগ নিয়ে একটি চক্র টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কায়দায় বেশি টাকা আদায়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়া রুটে বিমান ভাড়া কয়েকগুণ বেশি নিয়েছে। ৩০ হাজার টাকার টিকিটের দাম ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও টিকিট মেলেনি।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত ২১ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ২১ মের পর আর অনুমোদন দেয়ার কথা না থাকলেও মন্ত্রণালয় আরও ১ হাজার ১১২ জনকে তা দিয়েছে।
অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মালয়েশিয়া চলে গেছেন ৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ জন।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১ হাজার ৫০০ জন মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন। কিন্তু অনুমোদন পেয়েও ৩১ হাজার ৭০১ জনের মালায়েশিয়া যাওয়া হচ্ছে না।
এই সংকট লাঘবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে। তাতে সর্বোচ্চ ২৭১ জন যাত্রীর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ মেলে। অতিরিক্ত এই ফ্লাইটের ভাড়া ধরা হয় জনপ্রতি ৭৩ হাজার ৬১৬ টাকা।
এদিকে, এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি প্রবাসী কর্মীদের। তাদের দাবি, হয় সময় বাড়ানো হোক নতুবা তাদের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেয়া হোক।