দুই যুগ পর দুইদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিনের এই সফর বিশ্ব রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া পুতিনের এই সফর পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন এক মাত্রা যোগ করবে।
এর আগে, সবশেষ ২০০০ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পুতিন উ. কোরিয়ায় গিয়েছিলেন। তখন উ. কোরিয়ার নেতা ছিলেন বর্তমান নেতা কিম জং উনের পিতা কিম জং ইল।
গত বছর সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে কিম জং উন যখন পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন, তখনই তিনি পুতিনকে উত্তর কোরিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
স্থানীয় সময় সোমবার ক্রেমলিন জানায়, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আমন্ত্রণে ১৮-১৯ জুন- দুইদিনের সৌজন্য সফরে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেখানে যাচ্ছেন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম কেসিএনএ-ও এই সফরের কথা প্রকাশ করেছে। তবে তারা কেউই বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির সংবাদপত্র রডং সিনমুন মঙ্গলবার এই সফর উপলক্ষে দেয়া পুতিনের একটি চিঠি প্রকাশ করেছে। সেখানে পুতিন লিখেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে একতরফা ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, তার বিপরীতে আমরা একটা বিকল্প বাণিজ্য পদ্ধতি ও পারস্পরিক সমঝোতায় পৌছতে পারব। একই সঙ্গে আমরা ইউরেশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারস্পরিক সমতার ভিত্তিতে একটা রণকৌশল তৈরি করতে পারব।
এই চিঠিতে তিনি একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন দেওয়ার জন্য উত্তর কোরিয়াকে ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে বলেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ প্রয়োগ করছে, ব্ল্যাকমেইল করছে এবং অব্যাহতভাবে সামরিক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, সেটি প্রতিরোধে রাশিয়া পিয়ংইয়ংকে সমর্থন দিয়ে যাবে।
পুতিনের সঙ্গে সফরে দেশটির বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একটি প্রতিনিধিদল থাকবে। এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও পুতিনের জ্বালানিবিষয়ক প্রধান উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক।
সফরে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একটি অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে জানিয়েছেন পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। তিনি বলেন, চুক্তিটি দেশ দুটির মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়াবে। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দেশ দুটির মধ্যে যা হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় রেখেই এই চুক্তি সই করা হবে। তবে এ চুক্তি সরাসরি কোনো দেশকে লক্ষ্য করে করা হচ্ছে না।
পুতিনের উত্তর কোরিয়া সফরকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। পুতিনের এ সফর নিয়ে গত শুক্রবার মার্কিন উপ-রাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ভাইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম হং-কিউন। দক্ষিণ কোরিয়ার শঙ্কা, পুতিনের সফরের ফলে মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়বে, যা জাতিসংঘের প্রস্তাবের লঙ্ঘন।
উত্তর কোরিয়া সফর শেষে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভিয়েতনাম সফরে যাবেন পুতিন। পুতিনের উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েতনাম সফরের কথা কিছুদিন ধরে শোনা গেলেও এতদিন পর্যন্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি।