টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে ভয়ানক বন্যা হয়েছে। যে সড়কে দাপিয়ে বেড়িয়েছে মোটরযান আজ সেই সড়কে চলছে নৌকা। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জুন) বিকেল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী পাড়ের বসতঘর থেকে পানি নামলেও বাড়ছে হাওরের পানি। বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে হাওর এলাকায়। এতে দুর্ভোগ আর দুর্দশায় আর হতাশায় দিন কাটছে সুনামগঞ্জের মানুষের। গত তিনদিন ধরে জেলার অন্তত ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর পাড় থেকে পানি কিছু কমলেও এখন শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, হাজিপাড়া, নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছননগর, মল্লিকপুর, নবীনগর ও কালীপুর এলাকায় কোমর থেকে হাঁটু সমান পানি রয়েছে। এসব পানি স্থির হয়ে আছে, নড়াচড়া করছে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার চারটি পৌরসভা এলাকাসহ ৭৮টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৮টি গ্রামের ছয় লাখ ৬০ হাজার মানুষ বন্যা পরিস্থিতির শিকার।
সুনামগঞ্জ জেলার পুরোটাই বন্যাকবলিত হলেও সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগর ও ছাতক উপজেলা। ছাতক উপজেলার পৌরসভাসহ সকল ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করার কারণে সুনামগঞ্জের অনেক হাওর এখন পানিতে টইটুম্বুর। আর এর ফলে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সুনামগঞ্জ সদর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা ও শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। ইতিমধ্যে মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার ৭ হেক্টর জমির সবজি খেত পানিতে নষ্ট হয়েছে।
এদিকে বন্যায় তলিয়ে গেছে সকল উপজেলার স্থানীয় সড়ক। জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগর এবং ছাতক উপজেলার।
প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী সুনামগঞ্জ জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যা আক্রান্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সুনামগঞ্জের বন্যা আক্রান্ত মানুষের পাশে প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
এদিকে, তিনদিন ধরে পানিবন্দি বাসিন্দারা নানা ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। কেউ কোনো সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ জানান অনেকে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বানভাসি মানুষকে সহায়তা করতে ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মানুষ এসব কেন্দ্রে ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারের দেয়া ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে মেডিকেল দল গঠন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, ২৪ ঘণ্টায় পানি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস থাকায় পানি আরও বাড়তে পারে।