এবার মানব বীর্যে মিলেছে মাইক্রপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব। এক গবেষণায় পরীক্ষা করা সমস্ত মানব বীর্যের নমুনায় পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। গবেষকরা বলছেন, প্রজননের ওপর এর প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা জরুরি। কয়েক দশক ধরেই পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ (স্পার্ম কাউন্ট) কমছে। ৪০ শতাংশ স্পার্ম কাউন্ট কমার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যদিও অনেক গবেষণায় রাসায়নিক দূষণ এর কারণ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
সায়েন্স অব দ্য টোটাল জার্নালে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। চীনের কিংদাও ইউনিভার্সিটির গবেষক নিং লি ও তার সহকর্মীরা বলেন, গবেষণা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছে, মানব স্বাস্থ্যের ওপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আর প্রজননের ওপর সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। আর গবেষণায় আট ধরনের প্লাস্টিকে উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে প্যাকেজিংয়ের কাজে ব্যবহৃত পলিস্টাইরিন। পরিমাণের দিক থেকে এরপরই আছে প্লাস্টিকের ব্যাগে ব্যবহৃত পলিইথিলিন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পিভিসি।
এছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। সেগুলোতে দেখা গেছে, সর্বত্রই মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ হচ্ছে। মে মাসে পরীক্ষা করা ২৩টি পুরুষ অণ্ডকোষের নমুনার সবকটিতে পাওয়া গেছে এই ক্ষতিকর কণা। সম্প্রতি মানুষের রক্ত, প্লাসেন্টা ও বুকের দুধেও পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি। এসব গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত করছে, মানবদেহের সর্বত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই দূষণকারী অতিক্ষুদ্র কণা। স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব এখনও জানা যায়নি। তবে গবেষণাগারে দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহের কোষের ক্ষতি করে।
চীনের জিনানে ৪০ জন্য সুস্থ পুরুষের বীর্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চীনে আরেক গবেষণায় ২৫ নমুনার প্রায় অর্ধেকের মধ্যে মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। ইতালিতে আরেক গবেষণায় ১০ জন সুস্থ পুরুষের থেকে সংগ্রহ করা বীর্যের নমুনার মধ্যে ৬ জনের নমুনাতেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি মিলেছে।
সম্প্রতি ইঁদুরের ওপর করা কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক ইঁদুরের স্পার্ম কাউন্ট কমিয়ে দিয়েছে এবং অস্বাভাবিক আচরণের কারণ হয়েছে। পাশাপাশি হরমোনে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে এর কারণে।
প্রসঙ্গত, লাখ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে ফেলে দেয়া হয়। এর অনেকটাই মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। এসব অতিক্ষুদ্র কণা মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীর সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত গোটা পৃথিবী দূষিত করেছে। মানুষ খাবার ও পানি এবং নিশ্বাসের সঙ্গে এসব অতিক্ষুদ্র কণা গ্রহণ করে।