muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

সরকারি কর্মচারি আইনই দুর্নীতির প্রধান উৎস : হানিফ

সরকারি কর্মচারি আইনই দুর্নীতির প্রধান উৎস : হানিফ

দফায় দফায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করার পরেও দুর্নীতির প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, সরকারি কর্মচারি আইনই দুর্নীতির প্রধান উৎস। বারবার দুর্নীতির পরেও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নমনীয় আচরণ করা হয়। ২০১৮ সালে আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জমা হয়েছে। এটা তো শুধু অভিযোগ জমা হয়েছে। এ রকম হাজার হাজার মতিউর এমন অভিযোগে অভিযুক্ত আছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছেন। দফায় দফায় বেতন বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু তারপরেও দুর্নীতি কমানো সম্ভব হয়নি। দুর্নীতির বিধিবিধানকে বরং আরও নমনীয় করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে তারপরেও কেন দুর্নীতি হবে জানতে চান মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি কর্মচারি শৃঙ্খলা আপিলে দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তাদের চাকরিতে বহাল রাখার সুযোগই কেবল রাখা হয়নি, বরং পদোন্নতি প্রদান, সসম্মানে অবসরে যাওয়া এবং পেনশনের সুযোগও এখানে রাখা হয়েছে। এমনকি একাধিকবার দুর্নীতি করারও সুযোগ রাখা হয়েছে। ঘুষগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়া স্বত্ত্বেও এটিকে দুর্নীতির সঙ্গাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এছাড়াও দণ্ডের বিধানেও বৈষম্য আছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখি, জাতীয় পর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে যদি ফৌজদারি মামলা হয় তাকে গ্রেপ্তারে কারও অনুমতি লাগে না। অথচ একজন সরকারি কর্মকর্তা, একই অভিযোগ যদি তার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে তার উধ্বতন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন লাগবে। এই যে সরকারি কর্মচারি আইন ২০১৮ এটাই কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অপরাধ করতে উৎসাহিত করেছে।

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারির অপরাধেরর শাস্তি ১ বছরের কম হলে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হবেন না। তাকে তিরস্কার, পদোন্নতি স্থগিত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছে যা সুশাসনের সহায়ক বিধান নয়। আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে এরাই আবার তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাখে। এটা কার্যত অপরাধী সুরক্ষা আইন হিসেবে বিবেচিত। আমার প্রস্তাব থাকবে এই আইনটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, আজকে যখন দুর্নীতির কথা ওঠে প্রথমেই আঙ্গুল ওঠে রাজনীতিবীদদের দিকে। রাজনীতিবীদরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, এটাই আমাদের দেশে প্রচলিত। অথচ এখানে যে সংসদ্যরা আছেন, একমাত্র মন্ত্রী ছাড়া তাদের সেই এক্সিবিউটিভ পাওয়ারই নাই। তাদের সিগনেটরি অথরিটিই নাই, তারা কিভাবে দুর্নীতি করবে? দুর্নীতি হয়ই তো সরকারের ডেভেলপমেন্ট ও প্রকিউরমেন্ট ওয়ার্কে। সেখানে একজন রাজনীতিবীদের সুযোগ কোথায় দুর্নীতি করার, যদি সরকারি কর্মকর্তারা এর সাথে জড়িত না থাকে?

দুর্নীতি রোধে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবও সংসদের সামনে তুলে ধরে হানিফ বলেন, দুর্নীতি দমন করতে হলে প্রথমেই আমাকে ভোগের রাস্তা বন্ধ করতে হবে। এর অর্থ রেজিস্ট্রি অফিস, গাড়ির শো রুম; এখান থেকে প্রতি মাসে যারা জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট রেজিস্ট্রেশন করেছেন বা গাড়ি কিনেছেন, তালিকা নিয়ে স্পেশাল টিম পাঠিয়ে আয়ের বৈধ উৎস জানার জন্য ব্যবস্থা করা হোক।

তিনি আরও বলেন, চাকরিতে নিয়োগের সময় হলফনামা দিতে হবে। এটা এক সময় ছিল এখন দিতে হয় না। প্রতি ৫ বছর পর এবং পদোন্নতির সময় এই হলফনামা দিতে হবে। যাতে করে এ সময়ে সে কত সম্পদ অর্জন করেছে জাতি তা জানতে পারে। স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমে সরকারি কর্মচারিদের বেতন কাঠামো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। যাতে আমাদের প্রজন্মরা জানতে পারে তার বাবা, ভাই বা তার আত্মীয় কত টাকা বেতন পান। এটা করলে তাদের মধ্যে লজ্জা হবে। পরিবারের কাছেও তারা হেয় প্রতিপন্ন হবে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি রোধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে হানিফ বলেন, আপনি বাজার কখনোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না যদি সেখানে দুর্নীতির অবাধ প্রবাহ থাকে। আপনি দেখেছেন এবারের কোরবানির ঈদের সময় ছোট দুটি ঘটনা যেটি নিয়ে সারাদেশে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। একটা গরু এক কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। যার মাংস হবে ১ হাজার ৪০০ কেজি। প্রতি কেজিতে দাম প্রায় ৭ হাজার টাকা করে পরে। এটা কারা কিনল। বৈধ আয় যাদের তারা এটা কিনতে পারে না। শুধুমাত্র অবৈধ আয় যাদের তারাই এভাবে খামখেয়ালি করে কিনতে পারে।

তিনি আরও বলেন, একটা ছাগলের দাম, যেটা হয়ত সর্বোচ্চ ১২০ কেজি হবে। ১৫ লাখ টাকা দিয়ে সেই ছাগল কিনেছে। এটা কারা করতে পারে? যাদের অবৈধ আয় আছে তারাই করতে পারে। বৈধ আয়ের টাকা কেউ এভাবে পানিতে ফেলতে পারে না। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আগে দুর্নীতিটাকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ।

বৈধ আয় দিয়ে এক কোটি টাকায় গরু আর ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করে মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, যে জিনিসটা এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঘ্জ সেটি হলো দুর্নীতি। দুর্নীতিটাই আমাদের সরকারের সব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তারপরেও কিন্তু আমরা এখনও এটি দমন করতে পারি নি বা নিয়ন্ত্রণও করা যায়নি। আজকে আমরা যখন দেখি বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যায়, এর একটিই কারণ। এছাড়াও কালো টাকা সাদা করতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাবও দেন আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার বিধান বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। আজকে আমরা দেখলাম বিএনপি এটার সমালোচনা করছে। সমালোচনা আগে বিএনপি নেতারা যদি আয়নায় নিজেদের চেহারাটা দেখতেন, তাহলে জাতি খুশি হতো জানতে পারত। তাদের লজ্জা হওয়া উচিত ছিল, যে এই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ৩৩ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। তাদের অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান সাহেব ৩১ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে আমার ছোট একটি প্রস্তাব আছে। আমরা দেখেছি মাত্র ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়েই কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি বৈধ আয় করে ৩০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে আর একজন অবৈধ আয় বা অপ্রদর্শিত টাকাটা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদা করবেন এটা মনে হয় খুব যৌক্তিক মনে হয় না। এক্ষেত্রে অনেকেই ট্যাক্স দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করবে। তারা মনে করবে, এ বছর ট্যাক্স না দিয়ে আগামী বছর ১৫ শতাংশ দিয়ে এই সুযোগটা নিতে পারি। এ কারণে ৩০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়েই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হোক।

Tags: