গঙ্গা ও তিস্তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আপত্তির প্রশ্নে বিষয়টি ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’ আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এ প্রশ্ন ভারত সরকারকে করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ প্রশ্নটা ভারত সরকারকে করলে ভালো হয়। তারাই এটার সঠিক উত্তর দিতে পারবে।
বুধবার (২৬ জুন) ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডের সঙ্গে সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এ পরামর্শ দেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গা ও তিস্তায় বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিমতের কথা বলেছেন। রাজ্য সরকারের কারণে কিন্তু বাংলাদেশ তিস্তার পানি পায়নি। এখন আবার বাঁধা হয়ে সামনে আসছে রাজ্য সরকার। এমন পরিস্থিতি কোনো আশা দেখেন কি না? -জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রীর কাছে।
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিষয় তাদের আভ্যন্তরীণ। আমাদের সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা স্মারক করে বা চুক্তি করে। ঐকমত্য হয়, দ্বিমত হয়; সেটা তাদের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমি মনে করি, এ প্রশ্নটা ভারত সরকারকে করলে ভালো হয়। তারাই এটার সঠিক উত্তর দিতে পারবে। কারণ, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে তিনি বলেন, গঙ্গা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চুক্তি না হলেও এটি অটোমেটিক চলবে। চুক্তিতে সেভাবে বলা আছে, আগে চুক্তিটি সেভাবে করা আছে। তবে আমরা নবায়ন নিয়ে আলোচনা করছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য দ্রুত একটি কারিগরি দল বাংলাদেশে যাবে। কবে নাগাদ কারিগরি দল আসতে পারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টেকনিক্যাল কমিটি আসতে তো একটু সময় লাগবে। মাত্র আমরা ঘুরে এলাম। টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করতে হবে।
ভারতের সঙ্গে পুনরায় বন্ধ রেল যোগাযোগ চালুর বিষয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে তার জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ তো আছে। ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা রেল যোগাযোগ। তারপর উত্তরবঙ্গ-শিলিগুড়ি রেল যোগাযোগ। ১৯৬৫ সালের আগে অনেক বেশি রেল যোগাযোগ ছিল এবং ৬৫ সালে যুদ্ধের পর এ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, আমরা সেগুলো ধীরে ধীরে চালু করার কাজ করছি।
তিনি বলেন, শুধু ভারতের সঙ্গে হচ্ছে তা নয়, আমরা নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও রেলে এবং গাড়িতে করে যেতে পারি সে নিয়েও আলোচনা করছি। আমরা আঞ্চলিকভাবে যেন যোগাযোগ বাড়াতে পারি, সে নিয়ে আলোচনা করছি।
আজ ভোরে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নুরুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, আপনার কাছে খবরটি শুনলাম। আমাকে এটা যাচাই করতে হবে। তবে একটুকু বলতে পারি আমরা এবারও আলোচনা করেছি (দিল্লি সফরে) যাতে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নেমে আসে। সীমান্ত হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আশা করি আস্তে আস্তে সীমান্ত হত্যা কমে আসবে এবং এক সময় শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলটির অন্য নেতারা চুক্তি আর এমওইউর মধ্যে কোনো পার্থক্য বোঝেন না বলে অভিযোগ করেন ড. হাছান। তিনি বলেন, যারা চুক্তি আর সমঝোতার বিষয়টি বোঝে না তাদের বিষয়ে কি জবাব দেব, সেটি আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি, সমঝোতা হয়েছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সঠিকভাবে রাখতে পারেনি। বিএনপি কারণে-অকারণে সরকারের বিরোধিতা করে। যে সমঝোতা স্মারকগুলো হয়েছে, সেগুলোর সবগুলো বাংলাদেশের স্বার্থে হয়েছে।