সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন ও গত মঙ্গলবার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে এ নিয়ে ২০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া। সব হাসপাতালের চিত্র পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) ৬ জন, ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ৪১, শুক্রবার ৮৪, শনিবার ৩৮, রোববার ২১, সোমবার ৫, মঙ্গলবার ৩ ও গতকাল ৩ জনের মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, গত সোম, মঙ্গলবার ও বুধবার মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায় হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলে গতকাল মারা যাওয়া তিনজন হলেন রিয়া গোপ (৬), শাহজাহান হৃদয় (২১) ও সাজেদুর রহমান (২২)। তিনজনই গুলিবিদ্ধ ছিলেন।
রিয়া গোপের বাবা দীপক কুমার গোপ বলেন, তার বাসা নারায়ণগঞ্জ সদরে। তাঁর মেয়ে ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়।
শাহজাহান হৃদয়ের বোন কুলসুম আক্তার বলেন, ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দিবাগত রাত একটার দিকে হাসপাতাল থেকে তাদের ফোন করে শাহজাহানের ভর্তির খবর জানানো হয়। তিনি মহাখালীতে থাকতেন।
সাজেদুর রহমান যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বলে জানান তার ভাই সিরাজুল। তিনি ঢাকা মেডিকেলে থাকা অবস্থায় গতকাল বলেন, রোববার ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় সংঘর্ষের সময় সাজেদুর গুলিবিদ্ধ হন। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি কাজও করতেন।
সাভারের এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম তুহিন আহমেদ (২৬)। তিনি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের বাসিন্দা। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত রোববার তুহিনকে হাসপাতালে আনা হয়। তার পেটে গুলি লেগেছিল। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
সংঘাত–সংঘর্ষের পর বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার মাধ্যমে সারা দেশের এই তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত এক শিশুসহ ২১ জনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। তিন দিনে ঢাকার তিনটি সরকারি হাসপাতালের মর্গ থেকে পুলিশ এই ২১ জনের মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দিয়েছে। পরে সংস্থাটি মরদেহগুলো সিটি করপোরেশন নির্ধারিত স্থানে দাফনের ব্যবস্থা করে।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২২ জুলাই) এক শিশুসহ নয়জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে থেকে তাদের দেয়া হয়। একই দিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে থেকে দুটি মরদেহ পায় তারা।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) থেকে একটি মরেদহ তাদের কাছে পাঠানো হয়। বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে নয়টি মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দেয়া হয়েছে। এই ২১টি বেওয়ারিশ মরদেহ সিটি করপোরেশন নির্ধারিত স্থান মোহাম্মদপুরের রায়েরবাগ এলাকায় দাফন করা হয়েছে।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দাফন সেবা কর্মকর্তা কামরুল আহমেদ তিন দিনে পুলিশের কাছ থেকে বেওয়ারিশ হিসেবে ২১ জনের মরদেহ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।