আওয়ামী লীগের দুদিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর মধ্যে রয়েছে- আগামীকাল রোববার (৪ আগস্ট) রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং জেলা ও মহানগরে জমায়েত। পরদিন সোমবার বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট নিহত এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে শোক মিছিল।
শনিবার (৩ আগস্ট) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অন্যদিকে আমরা কোনো রকম মুখোমুখি অবস্থানে জড়াতে চাই না। সে কারণে সংঘাত হতে পারে এ ধরনের প্রোগ্রাম আমরা এড়িয়ে চলেছি। গতকাল (শুক্রবার) এবং আজও (শনিবার) আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল।
আওয়ামী লীগের নতুন কর্মসূচির কথা জানিয়ে কাদের বলেন, রোববার ঢাকা সিটির সব ওয়ার্ডে জমায়েত এবং বাংলাদেশের সব জেলা ও মহানগরীতে জমায়েত। ৫ আগস্ট (সোমবার) বিকেল ৩টায় আমরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোক মিছিল করবো।
সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির অভিভাবক। এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিনি বসতে চান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংঘাত এড়াতে পক্ষ-বিপক্ষ হতে পারে, পাল্টাপাল্টি হতে পারে এমন কর্মসূচি এড়িয়ে চলছি। বিবেক নয়, আমরা ঐক্যে বিশ্বাসী। যারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও প্রগতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস আমরা চাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দেশের অর্জিত গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতি যারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবার সম্মিলিত সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।
কাদের বলেন, এখানে আমরা একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই। অবুঝ শিশুরা কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় পড়ে না। অবুঝ শিশুর তাজা প্রাণ ঝরিয়ে আমাদের সরকারি দলের কোনো লাভ নেই। লাভ তাদের যারা এ শিশুর লাশ থেকে ফায়দা লুটতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তারপরও আমরা ইউনিসেফকে বলবো, অনুরোধ করবো যে ৩২ জন শিশু হত্যার কথা তারা বলছেন, আমরা সেই শিশুদের নাম-ঠিকানা জানতে চাই। এটা পেলে ব্যবস্থা নেবো। সত্য খুঁজে বের করুন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার। এ দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারই ফিরিয়ে এনেছে। আজ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের অপচেষ্টা চালাচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রতিভূ বিএনপি-জামায়াত। তারা বারবার জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত এবং রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ। তাই যে কোনো আন্দোলন দেখলে সেটাকে সরকারবিরোধী রূপ দিতে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করছে।
বিএনপি-জামায়াত লাশের রাজনীতি করছে দাবি করে কাদের বলেন, গত শুক্রবার তাদের ষড়যন্ত্র ও উসকানির মাধ্যমে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার বাহিনী সহিংসতা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছে। ফলে দুটো তাজা প্রাণ ঝরে গেলো। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই আহত। এছাড়াও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। পুলিশ সদস্য হত্যার দায় কার, তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চান কাদের।
শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সহিংসতা হয়েছে তার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়িত নয় উল্লেখ করে কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবিরোধী একটা মহল চলমান সংকট জিইয়ে রেখে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেহাত হয়ে গেছে। চলে গেছে তৃতীয় পক্ষের হাতে, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে চায়। এ অশুভ শক্তির অশুভ তৎপরতা আমরা সফল হতে দিতে পারি না। আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট শতভাগ। আমরা শিক্ষার্থীদের নিকট দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। তারা আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। দেশটি আমাদের। কোনো পক্ষকে বাদ দিয়ে নয়, বরং সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাবে আমাদের এ বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাদের বলেন, আমরা অফিসিয়ালি সেটা বলিনি। আমাদের যোগাযোগের একটা মাধ্যম তো আছে। যখন যোগাযোগটা হবে, তখন আপনারা দেখতে পাবেন, জানতে পাবেন। এখানে কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন আলোচনার দরজা খোলা। কাজেই বিভিন্নভাবে যোগাযোগ হতে পারে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলছেন তার দরজা খোলা, তিনি আলোচনা করবেন। তাহলে নিচের দিকে আর কাউকে দায়িত্ব দেওয়া বা না দেওয়ার কোনো ব্যাপার নয়। আমাদের যোগাযোগের দরজা খোলা।
তারা আলোচনা না করলে আওয়ামী লীগ কী করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আমি আমার পজিটিভ বিষয়টা বললাম। নেগেটিভে যাবো কেন? দরজা খোলা রাখছি।
বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে কি না, ঘটলে আওয়ামী লীগ কী করবে– জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
তদন্তে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের কাছে সরকার আবেদন করেছে কি না– জানতে চাইলে কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী এটা তার বক্তব্যে বারবার উল্লেখ করেছেন। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী বলার পর...। জাতিসংঘ একটা প্রস্তাব দিয়েছে। এটা তো চিঠি দিয়ে বলেনি। আমরাও সেটাতে সায় দিয়েছি।
রোববার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি বলে দিয়েছি। এজন্য আমরা জমায়েত কর্মসূচি দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।