ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খারাপ সময়ের মুখোমুখি অনেকবারই হতে হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। কখনো আইসিসি থেকে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন, কখনো বা খারাপ ফর্ম কিংবা ভক্তদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে সমালোচিত হতে হয়েছে। তবে এবারের ঘটনা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত ৫ আগস্ট (সোমবার) ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আর সদ্য বিলুপ্ত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সংসদ সদস্যের পদ খোয়ালেন, কানাডায় খেলতে নেমে চরম লাঞ্ছিতও হয়েছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, একের পর এক তাজা প্রাণ ঝড়েছিল রাস্তায়। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনের অনেকে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানালেও নীরব ভূমিকায় ছিলেন সাকিব। এ ছাড়া বিদেশে সে সময় তিনি পরিবার নিয়ে দারুণ সময় কাটাচ্ছিলেন। কানাডার ফ্র্যাঞ্জাইজি লিগের ব্যস্ততার পাশাপাশি পরিবার নিয়ে ঘুরতেও দেখা গেছে তাকে। শুধু তাই নয়, প্রবাসী দর্শকরা আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি পাল্টা বলেছিলেন ‘দেশের জন্য আপনি কী করেছেন?’
দলের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা এখন একপ্রকার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছেন এবং বাকিরা দেশ ছাড়ার চেষ্টায় আছেন। এমন অবস্থায় সাকিবের ক্রিকেটে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। গুঞ্জন আছে, এমন পরিস্থিতিতে হয়তো দেশে ফিরবেন না তিনি। সে রকম বাধ্যবাধকতাও নেই অবশ্য। কারণ তিনি এবং তার স্ত্রী-সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। তবে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কদিন পরই পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। আসন্ন টেস্ট সিরিজটি খেলতে আগে থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন সাকিব। যদিও সিরিজটি খেলা নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ দেশ ছাড়ার আগে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাকিব বলেন, ‘নিজের জন্য কোনো প্ল্যান নাই। এখন প্ল্যান হচ্ছে– দুইটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আছে আমার সামনে। একটা এমএলসি (যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট)। যেটার জন্য এখন যাচ্ছি। এরপরই আছে গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি, যেটা কানাডাতে। দুটা টুর্নামেন্ট খেলি, দেখি আমার নিজের কি অবস্থা। এরপর দেশের জন্য তো ইন্টারন্যাশনালে আছে পাকিস্তানের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ। আপাতত প্ল্যান এটুকুই।’
‘খুব বেশি আসলে প্ল্যান করিনি। নিজেরও বোঝার দরকার আছে। এখন আসলে ওরকম সময় নেই যে তিন বছর বা চার বছর সময়ের প্ল্যান করার। আমার মনে হয় তিন মাস ছয় মাসের প্ল্যান করাই বেটার। এর পরবর্তী প্ল্যানটা তার পরে। পাকিস্তান সিরিজ পর্যন্তই আপাতত প্ল্যান আছে’, আরও যোগ করেন সাকিব।
সাকিব ইস্যুতে বিসিবির বক্তব্য
গতকাল বুধবার মিরপুরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাকিবের দেশে ফেরা ও খেলা নিয়ে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের সহকারি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস বলেন, 'দেখুন সাকিব আল হাসানের ১২ই আগস্ট পর্যন্ত এনওসি আছে। উনার ১৩ই আগস্ট দেশে আসার কথা, আমাদের কাছে রিপোর্ট করার কথা।তার সাথে যোগাযোগ করব এবং তার প্ল্যানটা জানার চেষ্টা করব।'
সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় এখন আর সংসদ সদস্য নন সাকিব। এ বিষয়ে নাফীস বলেন, 'রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী সাকিব আল হাসান এখন সংসদ সদস্য নন। উনি একজন ক্রিকেটারই রয়েছেন। প্রত্যেকটা মানুষেরই নিরাপত্তার ব্যাপার রয়েছে তো আমরা যেহেতু তার ১২ ই আগস্ট পর্যন্ত এনওসি রয়েছে। তারপরে তার বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমর জয়েন করার কথা। সিলেকশন প্যানেল কিন্তু এখনো বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে দল ঘোষণা করেনি। বাংলাদেশের জন্য যখন উনারা দল ঘোষণা করবেন সে যদি টিমে থাকে তখন একরকম যখন টিমে না থাকবে তখন তো তার এনওসি লাগছে না।'-যোগ করেন নাফীস।
নাফীস আরও বললেন, 'একটা প্রশ্ন হচ্ছে সাকিব আল হাসান অ্যাভেলেবল আছেন কি না আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে উনি সিলেক্টেড হচ্ছেন কি না। আমার মনে হয় সামগ্রিক পার্থক্যটা আমরা সবাই বুঝি। ওটার ওপর ডিপেন্ড করে আমরা আমাদের এক্টিভিটিস আছে সেভাবে পরিচালনা করব।'
সাকিবের গুরু ফাহিমও জানেন না
এক সময় স্লোগান উঠত– ‘বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান।’ তার কারণও নিশ্চয়ই অমূলক নয়, তাকেই যে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পোস্টারবয় হিসেবে জানে সারা বিশ্ব। কিন্তু দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি নিয়ে নীরব থাকায় তাকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।
সাকিব নীরব থাকলেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে গেছেন তার গুরু ও ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সাকিব প্রসঙ্গে। জবাবে তিনি বলেন, তার (সাকিব) সুযোগ ছিল ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর, সহানুভূতি দেখানোর। কিন্তু কেন হয়নি সেটা ও-ই ভালো জানে আমি তো বলতে পারব না। তার ফ্যান বা তাকে যারা পছন্দ করে তাদের রিয়্যাকশনটা খুব স্বাভাবিক। তারা আশা করেছিল কিছু না কিছু একটা সাকিবের থেকে তাদের কাছে আসবে। যেহেতু আসেনি তাদের রিঅ্যাকশনটা জাস্টিফাইড। আমার সাথে কোনো কথা হয়নি। তার ক্যারিয়ার এখানে শেষ কি না আমি এখন বলতে পারব না।