পুলিশের সাবেক আইজিপি (মহাপরিদর্শক) বেনজীর আহমেদকে দেশত্যাগে সাহায্য করা নারী পুলিশ কর্মকর্তা শাহেদা সুলতানাসহ পুলিশের ১৭ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলামের সই করা দুটি আদেশে এই বদলি করা হয়।
র্যাব সদর দপ্তরের অপারেশনস উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত শাহেদাকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে, বেনজীরকে পালাতে শাহেদা সুলতানার সহায়তা করার একটি ছবি ভাইরাল হয়। জানা যায়, চলতি বছরের ৪ মে রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় সাবেক আইজিপি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বেনজীর আহমেদ সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে ওঠার জন্য শেষ সিকিউরিটি চেকের জন্য যাচ্ছেন।
বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দেশ ছাড়তে তাকে সহযোগিতা করেছিলেন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন। তার নাম শাহেদা সুলতানা। এতদিন তিনি র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (অপস) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহেদা অনেক দিন ধরেই বেনজীরের পরিবারের আস্থাভাজন। বেনজীর যখন র্যাবের ডিজি ছিলেন তখন শাহেদা র্যাবে ছিলেন। আইজিপি হলে শাহেদা আইজিপির সেকশনে আইজিপির স্ত্রীর প্রটোকল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। পরে বেনজীর আইজিপি পদ থেকে অবসর নেন তখন তাকে আবার র্যাব সদর দপ্তরের অপারেশন উইংয়ে সিনিয়র সহকারী পরিচালক (অপস) হিসেবে পোস্টিং দেয়া হয়।
ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পর বেনজীর দেশ ছাড়েন। ওই সিসিটিভি ফুটেজই বলে দেয়, বেনজীর যখন দেশ ছেড়ে চলে যান, তখন তিনি র্যাবে কাজ করা সত্ত্বেও নিজের প্রভাব খাটিয়ে বেনজীরকে ইমিগ্রেশন পার হতে সাহায্য করেন।
এছাড়া আইজিপির আদেশে রাজশাহী সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মাবুদকে ঢাকা পুলিশ টেলিকম সংস্থায়, টাঙ্গাইল পিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারিয়া আফরোজকে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. রাশেদ হাসানকে এসবিতে পাঠানো হয়েছে।
র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন, পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারওয়ার জাহান, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রাজীবুল হাসান, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মইনুল হক, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন, এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী, এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু লাইচ মো. ইলিয়াচ জিকু, এবিপিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম শাহরিয়ার আব্দুল্লাহ-বিন-ফরিদ ও নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সুমন রেজাকে ডিএমপিতে বদলি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহানিকে খাগড়াছড়ি এবিপিএন এর বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়েছে।
একইদিন আইজিপির অপর এক আদেশে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার তিনজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
তারা হলেন: পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি মুনতাসিরুল ইসলামকে ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে, পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১ এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলামকে এলআইসি শাখায় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের শাহজাদা মো. আসাদুজ্জামাকে পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১ এ বদলি করা হয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর ও বদলি অব্যাহত রয়েছে।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের মতো প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট সরকারের পতন হলে শেখ হাসিনার নিয়োগ দেয়া পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পরদিন চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়। তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট মো. ময়নুল ইসলামকে।
গত ৭ অগাস্ট র্যাব মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদকে সরিয়ে পুলিশের এই এলিট ফোর্সের নেতৃত্বে আনা হয় অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমানকে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানকে সরিয়ে সেই জায়গায় চলতি দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডির উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মাইনুল হাসানকে।