মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ
গুলশান হামলায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম এবং কানাডার টরোন্টো ইউনিভার্সিটির ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানের এ পর্যন্ত আটটি পরিস্থিতি বা অবস্থানের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। হলি আর্টিজানের ভেতর, দোতলার বরান্দা, ছাদ, মুক্তি পাওয়া এবং মুক্তির ঠিক পরে একটি বাসায়। এর বাইরে সর্বশেষ আদালতে হাজির করার সময়। এর মধ্যে সর্বশেষ ছবিতে এক মাসপর আদালতে হাজির করার সময়। মোট ছবি ১০টি।
ছবিতে যা আছে-
এক.
এই ছবিটি হামলার একদিন পর ৩ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায় আর্টিজানের দোতলার বারান্দায় হাসনাত একটু সামনে এবং পেছনে এক জঙ্গির সঙ্গে তাহমিদ।
দুই.
এই ছবিটি এক কোরিয়ান নাগরিকের ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া আর তিনি ভিডিও ধারণ করেন ২ জুলাই সকালে অভিযানের আগে এবং অভিযানের সময়। এতে হাসনাত করিম রেস্টুরেন্টের ভেতরে জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলছেন। আরও কয়েকটি সিকোয়েন্সে দেখা যায় তিনি হেঁটে হেঁটে কথা বলছেন।তার পাশে অস্ত্রধারী জঙ্গি।
তিন.
সোর্সের কাছ থেকে পাওয়া এই ছবিটি রোববার প্রকাশিত হয়েছে। এতে অভিযানের আগে সকালে আর্টিজানের ছাদে এক জঙ্গির সঙ্গে হাসনাত করিম ও তাহমিদকে আলাপ করতে দেখা যাচ্ছে। হাসনাতের টি শার্ট ইন করা।
চার.
এই ছবিটি ছাদের আলোচনার আরেকটি সিকোয়েন্স। জঙ্গিসহ হাসনাত ও তাহমিদ সামনে যাওয়ার জন্য এগুচ্ছে। তাহমিদের হাতে একটি স্মল আর্মস।
পাঁচ.
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে আর্টিজানের ছাদে এক জঙ্গি এবং হাসনাত ও তাহমিদকে। হাসনাত আয়েশি ভঙ্গিতে। তিনি প্যান্ট ও টি-শার্ট ঠিক করছেন।
ছয়.
হাসনাত, তাহমিদ ও জঙ্গি মুখোমুখি, আরও ঘনিষ্ঠ।
এক, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় এই পাঁচটি ছবিতেই তাদের সঙ্গে একই জঙ্গি।
সাত.
এই ছবিতে দেখা যায় অভিযান শুরুর আগে হাসনাত করিম তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন হলি আর্টিজান থেকে। এই ছবিটি কোরিয়ান নাগরিকের ভিডিও থেকে নেওয়া।
আট.
এই ছবিতে তাহমিদ বেরিয়ে যাচ্ছেন অভিযান শুরুর আগে। এই ছবিটিও কোরিয়ান নাগরিকের ভিডিও থেকে নেওয়া। হাসনাত করিম ও তার পরিবারের সদস্যদের বের হওয়ার পরের সিকোয়েন্স।
নয়.
এই ছবিটি তারা মুক্তি পাওয়ার পর একটি বাড়িতে। এখানে হাসনাত , তার পরিবারের সদস্য এবং তাহমিদকে দেখা যাচ্ছে। হাসনাত ও তাহমিদ দু’জনই মোবাইল ফোনে কথা বলছেন।
দশ.
এই ছবিটি বৃহস্পতিবার আদালত এলাকা থেকে নেওয়া। আর্টিজান থেকে মুক্তির একমাস পর গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের জন্য আদালতে পাঠানো হয়।
অপরাধবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ছবিগুলো দেখে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
১.একমাত্র আদালত এলাকার ছবি ছাড়া আর সব ছবিতে হাসনাত করিম এবং তাহমিদকে অন্তরঙ্গ অবস্থাতেই দেখা গেছে। তারা ছিলেন স্বাভাবিক। দেখে মনে হচ্ছে না- তারা জঙ্গি এবং জিম্মি আলাদা গ্রুপ। তাদের একই গ্রুপের সদস্য বলে মনে হয়েছে।
২. তাহমিদ তার হাতের আগ্নেয়াস্ত্র স্বাভাবিকভাবে ধরে আছেন।
৩.পুরো রাতের ভয়াবহতার পরও তাদের পোশাক এবং চেহারায় তার ছাপ নেই। হাসনাত করিমের টি শার্ট ইন করা এবং তাহমিদের পোশাক স্বাভাবিক।
৪.আর্টিজান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তারা একটি বাড়িতে বসে যে ভঙ্গিতে কথা বলছেন তা একদমই স্বাভাবিক। তাদের মধ্যে কোনও ভয় বা ঘটে যাওয়া ভয়াবহতার ছাপ নেই।
হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘সবমিলিয়ে তাদের আচরণ সন্দেহজনক এবং রহস্যময়। তাই তাদের ব্যাপারে গভীর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহমিদ যে অস্ত্রটি ধরে আছে তা স্বাভাবিক মনে হলেও জঙ্গিরা তাকে অস্ত্রটি হাতে নিতে বাধ্য করেছে কিনা তা তদন্ত করলেই জানা যাবে।
তদন্তকারীরা যা বলছেন
হলি আর্টিজান থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তদন্তকারীরা বেশ কয়েকবার হাসনাত এবং তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর তাদের গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার ৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান এবং অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ‘তারা সন্দেহের মধ্যেই আছে। তাদের ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও আচরণ দেখে সন্দেহ করার কারণ আছে। গুলশান হামলায় তাদের সম্পৃক্ততা গভীরভাবে তদন্ত করে দেখতেই রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।