muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

সমালোচনার মুখে ইটনায় ইউএনও নাজিমের পদায়ন বাতিল

সমালোচনার মুখে ইটনায় ইউএনও নাজিমের পদায়ন বাতিল

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন কুড়িগ্রামের সাবেক রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন। তাঁকে সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) করা হয়েছিল। কিন্তু সমালোচনার মুখে তার পদায়ন বাতিল করা হয়েছে।

এর আগে তাঁকে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথমে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ইউএনও, পরে ৭ সেপ্টেম্বর ইটনা উপজেলার ইউএনও করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রামে সাংবাদিক রিগ্যানকে হত্যাচেষ্টার মামলা এখনো তদন্তাধীন।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে নাজিম উদ্দিনের পদায়ন বাতিল করা হয়। তাঁকে ইটনা উপজেলার ইউএনও পদ থেকে সরিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের উপপরিচালক পদে তাঁকে বদলি করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মামুন শিবলী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, নাজিম উদ্দিনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।

এর আগে গত ৭ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার কাউছার হামিদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নাজিম উদ্দিনকে ইটনার ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হয়। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করা হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর সেখানে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল।

এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সাংবাদিক রিগ্যানের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেছেন, গুরুতর ফৌজদারি মামলা চলমান অবস্থায় নাজিম উদ্দিনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা বেআইনি।

নাজিম উদ্দিন ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে যান। রিগ্যানকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ‘আধা বোতল মদ ও দেড় শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগে মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে রিগ্যানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়।

নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আটকের একদিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পান রিগ্যান। পরে তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুলতানা পারভীনের বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) দুই বছরের জন্য স্থগিত, এনডিসি রাহাতুল ইসলামের তিনটি ইনক্রিমেন্ট কর্তন, আরডিসি নাজিম উদ্দিনের পদাবনতি ও রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে দাপ্তরিক দায়মুক্তি নিয়ে চাকরিতে বহাল থাকেন।

নির্যাতনের ঘটনার পর ভুক্তভোগী সাংবাদিক রিগ্যান কুড়িগ্রাম সদর থানায় এজাহার দিলে হাইকোর্টের নির্দেশে ডিসি সুলতানা পারভীন ও আরডিসি নাজিমসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা রেকর্ড হয়। মামলাটি বর্তমানে রংপুর পিবিআই তদন্ত করছে।

নাজিম উদ্দিন সাংবাদিক রিগ্যানকে নির্যাতন করা ছাড়াও মোংলায় দায়িত্ব পালনকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় এক ওষুধের দোকানের মালিককে মারধর করেন। কক্সবাজারে চাকরি করার সময় একজন কৃষকের গায়ে হাত তোলেন। সাতক্ষীরাতেও তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের পেটানোর অভিযোগ রয়েছে।

রিগ্যানকে নির্যাতনের দেড় বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ সরকার নাজিম উদ্দিনকে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করে। এরপর তাঁকে ইউএনও করা হলো।

সাংবাদিক রিগ্যানের আইনজীবী ইশরাত হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নাজিম উদ্দিন একটি ফৌজদারি মামলার আসামি। সেই মামলা তদন্তাধীন। তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের রুল রয়েছে। রুলের জবাবও দেয়নি এখনো। এই অবস্থায় তাঁকে পদায়ন ও চাকরিতে বহাল রাখা বেআইনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এটা করতে পারে না। আমরা বিষয়টি আদালতের নজরে আনব। পিবিআইকে বলব দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। নাজিম উদ্দিন অতীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, এখনো করছেন।’

Tags: