নেপালে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ১৯২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩১ জন। দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন অঞ্চলে টানা ভারী বৃষ্টির ফলে এই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অঞ্চলটিতে গত দুই দশকের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে জানিয়েছে নেপালের আবহাওয়া দপ্তর।
মৌসুমি বৃষ্টি এবং এর ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধস দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাভাবিক ঘটনা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও ঘনত্ব বেড়েই চলেছে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে বহু ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। এগুলোর মধ্যে বাগমতী নদীর তীরবর্তী বেশ কিছু অননুমোদিত বসতিও রয়েছে।
নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঋষি রাম তিওয়ারি জানান, বন্যার ফলে বহু মানুষ বিভিন্ন সড়কে আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধারে কাজ চলছে। সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার, নৌকা ও ভেলার মাধ্যমে আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। এ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
কাঠমান্ডুর প্রধান সড়কগুলোতে ভূমিধসের কারণে স্থল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে শহরটিতে তাজা ফলমূল ও শাকসবজির সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শহরের প্রধান পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী বিনয় শ্রেষ্ঠা জানান, কৃষকরা তাদের পণ্য প্রস্তুত রেখেছেন। কিন্তু সড়কগুলো বন্ধ থাকায় সবকিছু আটকে রয়েছে।
নেপালের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের একটি পর্যবেক্ষণ স্টেশন ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে, যা ২০০২ সালের পর সর্বোচ্চ।
বন্যার কারণে কেবল রাজধানী নয়, অন্যান্য অঞ্চলের সড়ক এবং জনপদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দুই ডজনের বেশি সড়কে এখনো মাটির স্তূপ পরিষ্কারের কাজ চলছে।
নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানির পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতিও হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাগমতী নদীর তীরে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তন এই দুর্যোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতজনিত দুর্ঘটনায় নেপালে এরই মধ্যে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। দেশটির সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজ করে যাচ্ছে। তবে বিপর্যয়ের ব্যাপকতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।