টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ভয়াবহ বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা শেরপুরে এবার প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মাঝে বন্যায় ৩১ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমনের চারা ডুবে যাওয়া ও ঢলে পড়ায় দিশেহারা কৃষকেরা।
কৃষকেরা বলছেন, বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পুকুরের মাছ পানিতে বের হয়ে গেছে। গরু-বাছুরের কষ্ট হচ্ছে। মানুষের রান্নাবান্না হচ্ছে না, চিরা-মুড়ি খেয়ে দিন কাটছে। বাড়ি-ঘর তো পানির তলে রয়েছেই।
প্রায় ১ হাজার হেক্টর সবজিখেত ডুবে যাওয়ায় আসন্ন মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত সবজি উৎপাদন হবে না। সবজি ও আমন চাষিরা বলছেন, বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। এখনও ফসলের খেতে পানি আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে ৩৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯০০ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
বন্যায় ক্ষতি প্রসঙ্গে শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘এবারের বন্যায় শেরপুর জেলায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে আমনের আবাদ ও শীতকালীন আগাম সবজি খেতের। এবার জেলায় আমনের আবাদ হয়েছে ৯৩ হেক্টর জমিতে যার প্রায় ৫০ শতাংশ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ২ হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদের অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পানি এখন চলে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমি থেকেও কিছু ধান পাওয়া যাবে। পানি নেমে যাওয়ার পরে আমরা আসল ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাবটি করতে পারবো। আপাত দৃষ্টিতে আমরা যা দেখছি, তাতে কৃষিতে শেরপুরে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘শেরপুর জেলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তারা হয়তো বড় আকারের প্রণোদনা বিবেচনা করবেন। প্রতিবছরই আমরা দুর্যোগের জন্য কৃষি প্রণোদনা পাই। আমাদের কর্তৃপক্ষ অবশ্যই এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। আমরা আশা করবো, খাদ্যবান্ধব শেরপুর জেলার কৃষকরা যেন এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।’
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কৃষি উদ্বৃত্ত শেরপুর জেলার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। বন্যার পানি কমে গেলে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গত ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৮৮ সালের পর এ বছরই এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেছে শেরপুরের মানুষ। বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট ও ফসলের মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে পাঁচ উপজেলার দুই লাখ বাসিন্দা।