যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর হোয়াইট হাউজে তার প্রথম দিনেই অভিবাসন এবং মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল প্রশ্নে বেশ কিছু নির্বাহী পদক্ষেপ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা এমন কথাই জানিয়েছেন।
এদিকে কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন মানবিক কর্মসূচির আওতায় লাখ লাখ অভিবাসীকে বৈধভাবে প্রবেশের যে অনুমতি দিয়েছিল, ট্রাম্প তাও বন্ধ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি বসবাসের নির্দিষ্ট সময় পেরোনোর পরেও যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে, তাদের স্বেচ্ছায় চলে যেতে উৎসাহিতও করতে পারেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসী বৈধতা পায়নি। এ সংখ্যা হয়ত বেড়েও গেছে। নিউ ইয়র্ক, শিকাগো ও ডেনভারসহ কয়েকটি শহর অভিবাসীদের আশ্রয় ও সাহায্য দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
ট্রাম্প গত ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করেন। হ্যারিস এবং বাইডেন প্রশাসন বহু সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী দেশে ঢুকতে দেয়াকে তাদের প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং ২০ জানুয়ারিতে ট্রাম্পের অভিষেকের আগে তার পরিকল্পনা পরিবর্তন হতে পারে।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে অভিবাসী গ্রেপ্তার রেকর্ড পর্যায়ে ছিল। বাইডেন প্রশাসন নতুন করে সীমান্তে বিধিনিষেধ আরোপ করায় এবং মেক্সিকো আইন প্রয়োগে কড়াকড়ি করায় এ বছর সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের প্রবেশ নাটকীয়ভাবে কমেছে।
তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লক্ষ্য অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা আরও নিচে নামিয়ে আনা এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার, আটক ও বহিষ্কারের জন্য যৌথ উদ্যোগে সরকারের সব বিভাগকে কাজে লাগানো।
রোববার রাতে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কট্টরপন্থি ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টম হোম্যান হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা ও অভিবাসন প্রয়োগের দায়িত্বে থাকবেন।
সোমবার নিশ্চিত করে নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জানিয়েছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অভিবাসন কর্মসূচির স্থপতি স্টিফেন মিলার ‘ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ফর পলিসি’ হিসেবে ফিরে আসবেন।
ট্রাম্পের আগ্রাসী এই কর্মসূচি ডেমোক্র্যাট শাসিত রাজ্য, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এবং অভিবাসনপন্থিদের কাছ থেকে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।
ট্রাম্প তার প্রথম দিনের নির্বাহী পদক্ষেপে দেশের ভেতরে আইনের কড়া প্রয়োগের আদেশ দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে- যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অভিবাসীরা গ্রেপ্তার ও আটক হতে পারে।
অভিবাসনপন্থি ‘আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল’ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখের বেশি অভিবাসী আইনগতভাবে থাকার অধিকার হারিয়েছে। তাদেরকে ফেরত পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার ফক্স নিউজকে ট্রাম্প নিযুক্ত নতুন ‘সীমান্ত সম্রাট’ হোম্যান বলেন, এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধেই আগে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থনকারী এবং স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছে এমন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মতো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের আরেকটি নির্বাহী আদেশে সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হবে জানিয়ে দুই কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য তহবিল উন্মুক্ত করতে ট্রাম্প সীমান্তে ন্যাশনাল গার্ড সেনা পাঠাতে চান। অবৈধ অভিবাসনকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে চান।