মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠঃ ঢাকার নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বুধবারের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন হ্যাপীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার।
অন্যদিকে জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার রুবেলের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেছেন, বিচারক যথাযথ ও আইনসম্মত আদেশই দিয়েছেন।
“বাদী অভিযোগ করলেন যে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে; আর চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখলেন, তার মধ্যে ধর্ষণের কোনো চিহ্নই নাই। তাহলে বিচারক কী করতে পারেন,” বলেন তিনি।
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগের এই মামলায় বাদী হ্যাপী ও আসামি রুবেলের উপস্থিতিতে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদীর নারাজি আবেদন খারিজের আদেশ দেন বিচারক তানজিনা ইসমাইল।
আদেশের প্রতিক্রিয়ায় হ্যাপীর আইনজীবী তুহিন সাংবাদিকদের বলেন, “ক্রিকেট দেখলেন, আইন দেখলেন না বিচারক।”
“বিচারক ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু মামলার ঘটনাকে এবং মিথ্যা তদন্তকে গুরুত্ব দেন নাই। বিচারকসুলভ মনোভাব পোষণ করে তিনি এ আদেশ দেন নাই,” অনুরোগ করেন তিনি।
আদেশের পর হ্যাপী সাংবাদিকদের বলেন, “আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তবে আমি সুষ্ঠু বিচারের আশায় অচিরেই হাই কোর্টে রিভিশন করব।”
আদালতে যাওয়ার আগে নিজের ফেইসবুক পাতায় তিনি লেখেন- “যাই হোক না কেন, ভেঙে পড়া যাবে না। সত্যের জয় একদিন না একদিন ঠিকই হবে।”
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর রুবেলের বিরুদ্ধে হ্যাপীর মামলার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। তবে রুবেলের দাবি, এই তরুণী তাকে ‘ব্ল্য্যাকমেইল’ করছেন।
এ মামলায় বিশ্বকাপের আগে চার দিন কারাগারেও ছিলেন রুবেল। পরে জামিন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যান তিনি। তার বিশ্বকাপ খেলা ঠেকাতে আদালতে গিয়েও ফল পাননি হ্যাপী। অন্যদিকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রুবেলের পারফরমেন্স ছিল উজ্জ্বল।
এরপর গত ৬ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক (ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার) হালিমা খাতুন আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন, যাতে রুবেলকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাপী ধর্ষণের যেসব আলামত উপস্থাপন করেছিলেন তাতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাদীকে পরীক্ষা করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডও বলেছে, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কোনো আলামত তারা পাননি।
এরপর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানির জন্য গত ১৭ মে মামলটি নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এলে হ্যাপী ওইদিন নারাজি আবেদন করেন।
নারাজি আবেদেনে বলা হয়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ‘সাক্ষীদের সঙ্গে কথা না বলেই’ এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ‘মনগড়া তদন্তের মাধ্যমে’ তিনি আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন।
পুলিশের দেওয়া এই তদন্ত প্রতিবেদন বাতিল করে অধিকতর তদন্ত চাওয়া হয় হ্যাপীর আবেদনে। ওই দিন নারাজি আবেদনের শুনানির জন্য বিচারক ২০ মে দিন রেখে রুবেলকে জামিন দেন।
বুধবার নারাজি আবেদনের শুনানিতে কাঠগড়ায় হ্যাপী বলেন, “মামলার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আমার কাছে কিছুই শোনেননি। আমাকে কোনো নোটিসও দেননি এবং আমার পক্ষের সাক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেননি।”
মামলায় যেসব আলামত রয়েছে সেগুলোও কোনো পরীক্ষাও করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন কিছু আশা কিছু ভালোবাসা চলচ্চিত্রের এই নায়িকা।
তিনি বলেন, “যখন আমার মেডিকেল পরীক্ষা করার দরকার ছিল, তখন তা করেনি। অথচ আমি থানায় গিয়েছিলাম, আমি পরীক্ষা করতে বললে পুলিশ অনেক গড়িমসি করেছে। শারীরিক সম্পর্কের চিহ্ন নষ্ট হয়ে যাওয়ার অনেক পরে পরীক্ষা করেছে।”
শুনানিতে হ্যাপীর আরেক আইনজীবী আবদুল্লাহ মনসুর রিপন যুক্তরাষ্ট্রের মনিকা-ক্লিনটন মামলা এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম ডিএনএ টেস্ট পরীক্ষার উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন, “আমরা তো বারবার আইও’র (তদন্ত কর্মকর্তা) কাছে গিয়েছিলাম।”
পুলিশকে সরবরাহ করা আলামতগুলো পরীক্ষার ব্যবস্থা না করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে অনিয়ম করেছে বলেও অভিযোগ করেন আবদুল্লাহ মনসুর।
এর বিরোধিতা করে রুবেলের আইনজীবী মাসুদ তালুকদার বলেন, “চিকিৎসক কোনো ক্ষেত্রে দৈহিক সম্পর্কের কোনো চিহ্ন পাননি।”
তদন্ত কর্মকর্তা সঠিক তথ্য দিয়েছেন দাবি করে অভিযোগ থেকে আসামি রুবেলের অব্যাহতি চান তার আইনজীবী। এরপরই বিচারক আদেশ দেন।
২০ মে ২০১৫/ নিঝুম