muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

অর্থনীতি

বকেয়া ঋণ আট বছরে শোধের সুযোগ

বকেয়া ঋণ আট বছরে শোধের সুযোগ

বৈশ্বিক মন্দার কারণে দেশে ডলারের দাম বাড়ায় যেসব আমদানিনির্ভর শিল্প খাতের উদ্যোক্তা ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তারা আমদানি খাতে নেওয়া ঋণ পরিশোধে আট বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। এসব ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে। এসব ঋণ আলাদা হিসাবে স্থানান্তর করে প্রতি মাসে বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। যেসব আমদানিকারক বিলম্বে ঋণ পরিশোধের শর্তে আমদানি করেছিলেন এবং ক্ষতির শিকার হয়েছেন, কেবল তারাই এ সুযোগ পাবেন। এ বিষয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, এর আওতায় সুবিধা নিতে হলে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। কোনো ঋণখেলাপি এ সুবিধা পাবেন না। এ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ঋণসীমা অতিক্রম করা যাবে না। ব্যাংকগুলোকে গ্রাহক ডলারের দাম বাড়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, করোনা মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমান উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় স্থানীয় উৎপাদনমুখী শিল্পগুলো কাঁচামাল আমদানিকালে বিনিময় হারজনিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাসসহ ফোর্সড ঋণ সৃষ্টি হচ্ছে এবং চলতি মূলধনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানিনির্ভর শিল্পসহ স্টিল খাত, সিমেন্ট খাত এবং স্থানীয় যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিক্রয়মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত, সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখার মাধ্যমে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানির গতিধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে নতুন নির্দেশনা প্রদান করা যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, খাদ্যপণ্যসহ অনেক পণ্যের দাম সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়। যেসব পণ্যের দাম সরকার কর্তৃক নির্ধারিত, তারাও এ সুবিধা পাবেন। এর মধ্যে খাদ্যপণ্য আমদানিকারকদের অনেকে এ সুবিধা পাবেন। কারণ তেল, চিনিসহ নানা পণ্যের দাম সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ সুবিধায় প্রচলিত হারে সুদ দিতে হবে। সুদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির জন্য ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খোলা ঋণপত্রের ক্ষেত্রে বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নির্ধারণ করবে। অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ নির্ণয়ের পদ্ধতিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতির সমপরিমাণ অর্থ গ্রাহকের ঋণঝুঁকি বিশ্লেষণ করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চলতি মূলধন ঋণসীমার বাইরে আলাদা একটি মেয়াদি ঋণ হিসাবে স্থানান্তর করা যাবে ক্ষতির সমপরিমাণ অর্থ; যা সর্বোচ্চ এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ আট বছর মেয়াদে সমকিস্তিতে মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে।

এতে আরও বলা হয়, এ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে একক গ্রাহক ঋণসীমা কোনোভাবেই অতিক্রম করা যাবে না। কোনো খেলাপি গ্রাহক প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা পাবে না। এ সুবিধা নিতে হলে গ্রাহকদের আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে নিজ নিজ বাণিজ্যিক ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এছাড়া গ্রাহক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে প্রকৃত অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না, তা ব্যাংক কর্তৃক নিশ্চিত হতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এ সংক্রান্ত সমুদয় নথিপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের যাচাইয়ের জন্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, ডলারের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহকের ক্ষতি নিরূপণের জন্য গ্রাহক যখন এলসি খুলে তখনকার ডলারের দাম এবং যখন এলসির দেনা শোধ করা হয় তখকার ডলারের দামের ভিত্তিতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে হবে।

সূত্র জানায়, ডলারের দাম বাড়ায় অনেক আমদানিকারক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে এলসি খোলার পর ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দামে ডলার কিনে দেনা শোধ করতে হয়েছে। এছাড়া যারা স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে এলসি খুলেছেন, তাদের দেনা শোধের সময় বাড়তি দামে ডলার কিনে ঋণ শোধ করতে হয়েছে। এতে উদ্যোক্তা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ ক্ষতির কারণে বর্তমানে অনেকের চলতি মূলধন কমে গেছে। রিজার্ভ তহবিলেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে অনেকের খেলাপি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ খাতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে।

এর আগে ইস্পাত খাতের তিনটি সংগঠন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ), বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ইস্পাতশিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের ৯০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। গত আড়াই বছরে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে ১২০-১২৫ টাকা হয়েছে। ফলে ইস্পাতশিল্পের চলতি মূলধন ৪০ শতাংশ কমে গেছে। মূলধন ঘাটতির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে পারছে না এবং খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো চলতি মূলধনসীমাও কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে সংকটের মুখোমুখি হয়েছে এ খাত।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা চান উদ্যোক্তারা। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে এ খাতে বাড়তি ঋণের যে দায় তৈরি হয়েছে, তা নিয়মিত ব্যাংক ঋণের বাইরে রেখে ১৬ বছরে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার দাবি করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আট বছরের সময় দিয়েছে।

Tags: