অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের দাপটে নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসের পর ফল নিয়ে খুব একটা অনিশ্চয়তা ছিল না। মাইকেল ক্লার্ক, স্টিভেন স্মিথের দৃঢ়তা ভরা ব্যাটিংয়ে কোনো নাটকীয়তার সুযোগ ছিলও না। কিউইদের স্বপ্ন ভেঙে ৭ উইকেটের জয়ে আবার সেরার আসনে বসেছে ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া।
নিউ জিল্যান্ডের হয়ে প্রায় একাই লড়েন গ্র্যান্ট এলিয়ট। রস টেইলর ছাড়া দলের আর কোনো ব্যাটসম্যান তাকে সঙ্গ দিতে না পারায় বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা দলটি। মিচেল জনসন ও জেমস ফকনারের দারুণ বোলিংয়ে ৪৫ ওভারে ১৮৩ অলআউট হয়ে যায় তারা।
ডেভিড ওয়ার্নারের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পর ক্লার্ক-স্মিথের অর্ধশতকে ৩৩ ওভার ১ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালের পর আবার বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে প্রতিযোগিতার সফলতম দলটি।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই অ্যারন ফিঞ্চকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ট্রেন্ট বোল্টকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যাওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান কোনো রান করতে পারেননি।
শুরুতে উইকেট হারানোর কোনো ছাপ পড়তে দেননি ওয়ার্নার। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দ্রুত এগুতে থাকে স্বাগতিকরা। ম্যাট হেনরি বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফিরে যান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ওয়ার্নারের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন ক্লার্ক। জীবনের শেষ ওয়ানডেতে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন তিনি। দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার পথে ৭২ বলে ৭৪ রানের চৎমকার ইনিংস খেলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। এই ইনিংস খেলার পথে স্মিথের সঙ্গে ১১২ রানের জুটি উপহার দেন তিনি।
বাকি কাজটুকু শেন ওয়াটসনকে সঙ্গে নিয়ে সহজেই সারেন স্মিথ। হেনরির বলে পুল করে চার হাকিয়ে দলকে জয় এনে দেয়া এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৫৬ রানে।
এর আগে রোববার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি নিউ জিল্যান্ডের। ৩৯ রানের মধ্যে বিদায় নেন দলটির প্রথম তিন ব্যাটসম্যান।
মিচেল স্ট্যার্কের করা প্রথম ওভারেই ফিরে যান অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। মুখোমুখি হওয়া তৃতীয় বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তার আউট দিয়েই ছন্দ পতনের শুরু হয় টুর্নামেন্ট জুড়ে দাপটের সঙ্গে খেলা নিউ জিল্যান্ডের।
দ্বাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসেই সাফল্য পান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। নিজের দ্বিতীয় বলেই এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মার্টিন গাপটিলকে বোল্ড করেন এই অফস্পিনার। জনসনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে কেন উইলিয়ামসনের বিদায়ে বিপদ আরো বাড়ে নিউ জিল্যান্ডের।
চতুর্থ উইকেটে শতরানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন এলিয়ট ও টেইলর। এই দুই জনের দৃঢ়তায় প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ভালো অবস্থানে পৌঁছেছিল নিউ জিল্যান্ড। এক সময়ে তাদের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৫০ রান।
এরপর মাত্র ৩৩ রান যোগ করতে শেষ ৭ উইকেট হারানো নিউ জিল্যান্ড দুইশ’ রান পর্যন্তও যেতে পারেনি। অতিথিদের কম রানে বেধে রাখায় বড় অবদান তিনটি করে উইকেট নেয়া জনসন ও ফকনারের।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম বলে (৩৬তম ওভার) টেইলরকে বিদায় করে ১১১ রানের জুটি ভাঙেন ফকনার। সেই ওভারেই কোরি অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করে অতিথিদের আরেকটি বড় ধাক্কা দেন ম্যাচ সেরা এই খেলোয়াড়।
দ্রুত রান তোলার জন্য নিউ জিল্যান্ড তাকিয়ে ছিল লুক রনকির দিকে। কিন্তু হতাশ করেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। স্ট্যার্কের বলে হ্যাডিনের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফিরে যান তিনি।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া নিউ জিল্যান্ডের ভরসা হয়ে ছিলেন এলিয়ট। খেলছিলেনও দারুণ। কিন্তু ফকনারের স্লোয়ারে তিনি হ্যাডিনের গ্লাভসবন্দি হলে অতিথিদের বড় সংগ্রহ গড়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। ৮২ বলে খেলা তার ৮৩ রানের চমৎকার ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও ১টি ছক্কায়।
এলিয়টের বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস। তাই পঞ্চম শিরোপা জিততে ছোট লক্ষ্যই পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ৪৫ ওভারে ১৮৩ (গাপটিল ১৫, ম্যাককালাম ০, উইলিয়ামসন ১২, টেইলর ৪০, এলিয়ট ৮৩, অ্যান্ডারসন ০, রনকি ০, ভেটোরি ৯, সাউদি ১১, হেনরি ০, বোল্ট ০*; জনসন ৩/৩০, ফকনার ৩/৩৬, স্ট্যার্ক ২/২০, ম্যাক্সওয়েল ১/৩৭)
অস্ট্রেলিয়া: ৩৩.১ ওভারে ১৮৬/৩ (ওয়ার্নার ৪৫, ফিঞ্চ ০, স্মিথ ৫৬*, ক্লার্ক ৭৪, ওয়াটসন ২*; হেনরি ২/৪৬, বোল্ট ১/৪০)
ম্যাচ সেরা: জেমস ফকনার।