muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কিশোরগঞ্জের খবর

প্রস্তুত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান, থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা

প্রস্তুত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান, থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা

দেশের অন্যতম বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে। ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এই ঈদগাহ। এই ময়দানে ঈদ জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় চার স্তরে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তাজনিত কারণে মুসল্লিদের সঙ্গে মোবাইল না আনার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তা ছাড়া ছাতা নেওয়ার ওপর দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

ঈদের দিন সকাল ১০টায় শুরু হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। ঈদ জামাতে ইমামের দায়িত্বে ফিরেছেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। গত (২ মার্চ) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ঈদগাহ ময়দান কমিটির মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে তাকে ইমামতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর পুনরায় দায়িত্বে ফিরলেন তিনি।

সোমবার (২৯ মার্চ) শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, নাঈমুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি, র্যাব-১৪ এবং পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরী।

ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, এবারও ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবারের ঈদের জামাতে মাস্ক, টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে মোবাইল ফোন না আনার জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কেউ ছাতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে বলেও জানান তিনি।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমরা সব সময় বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি ও করছি। এবারও পূর্বের সব বিষয় মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। তাই আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ইদগাহ ময়দানকে লক্ষ্য করে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বা পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে আসবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে। এখানে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র্যাব ব্যবহার করবে দুটি আর চারটি ব্যবহার করবে পুলিশ। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। থাকবে ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা।

তিনি আরও বলেন, পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠে প্রবেশ ও বাহির পথ নামাজের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারে তাই আমাদের এই আয়োজন। এখানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম থাকবে। পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। সুইপিং করা হবে। বোম ডিসপোজাল টিম ঢাকা থেকে আসবে। এ ছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে, র‍্যাব থাকবে। সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। আমরা কোনো হুমকি মনে করছি না।

ময়মনসিংহ র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি ও কমান্ডিং অফিসার নাঈমুল ইসলাম বলেন, স্নাইপার, ড্রোন ক্যামেরা ও দুটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে শতাধিক র‍্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। দুই থেকে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবেন তারা।

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া বলেন, মাঠের রং করা থেকে শুরু করে মুসল্লিদের অজু ও গোসলের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ বলেন, দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে দেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতটি হচ্ছে এই উপমহাদেশের প্রাচীনতম ঈদ জামাত। ১৮২৮ থেকে বড় জামাতের প্রচলন শুরু হয়, যদিও এর আগে থেকেই এখানে নামাজ আদায় হয়ে আসছিল। এই ঈদগাহ ময়দানে বিপুল পরিমাণ জায়গা যিনি ওয়াকফ্ করেছেন দেওয়ান আয়েশা খাতুনের সন্তান দেওয়ান মান্না দাদ খান। আমরা ওনাদেরকে স্মরণ করি, মাঠে যারা আগে ইমামের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মুসল্লি ছিলেন আল্লাহ পাক সবাইকে যেন মাফ করেন। সবচেয়ে গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে জামাতে মুসল্লির সংখ্যা বেশি হবে সে জামাতে সওয়াব বেশি হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. মাহমুদুল ইসলাম তালুদকদার, র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবির, শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।

প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। তবু এ ঈদগাহ ময়দানের ধারাবাহিক জামাত আয়োজনে ছন্দপতন ঘটেনি কিন্তু করোনা মহামারির কারণে দুই বছর এ ঈদগাহ ময়দানে ঈদের কোনো জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।

এই ঈদগাহের যাত্রা শুরু ১৭৫০ সালে। তবে ১৮২৮ সালে প্রথম আনুমানিক সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সেই থেকেই এই ঈদগাহসহ পুরো এলাকার নামকরণ হয় ‘শোলাকিয়া’। ১৮২৮ সাল থেকে জামাত গণনায় এবার ১৯৭তম জামাত হবে।

দীর্ঘ দিন আগে এ মাঠে অনুষ্ঠিত এক ঈদুল ফিতরের জামাতে কাতার গণনা করে ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি মিলে। তখন থেকেই এ ঈদগাহ ময়দানটিকে সোয়া লাখিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবে লোকজন ডাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে উচ্চারণ বিবর্তনে এ ঈদগাহ ময়দানের নাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠে।

Tags: