পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে চীন নীতিগতভাবে সম্মত রয়েছে, তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ প্রকল্পের কোনো পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রণয়ন হয়নি।
রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
একনেক সভায় মোট ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে সরকারের বৃহৎ কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মাহমুদ বলেন, “বিগত কয়েক বছর ধরে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প নিয়ে শুধুই নীতিগত আলোচনা হয়ে আসছে। ভারতের সহযোগিতা ছাড়া যে সীমিত পরিমাণ পানি আসে, সেটি কীভাবে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে এখনও কোনো পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “চীন কয়েক বছর আগে একটি প্রাথমিক নকশা দিয়েছে, তবে সেটি প্রকল্প পর্যায়ে নয়—একটি প্রস্তাবনার মতো। আমরা এখনও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর্যায়ে আছি। প্রকল্পের কার্যকারিতা, পানির প্রাপ্তি ও ব্যবহারযোগ্যতা—এসব প্রশ্নের এখনও উত্তর মেলেনি।”
তবে তিনি নিশ্চিত করেন, “চীন প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে নীতিগতভাবে আগ্রহী। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই ও পূর্ণাঙ্গ নকশা অপরিহার্য।”
এদিকে, একনেক সভায় সবচেয়ে বড় প্রকল্প হিসেবে অনুমোদ পেয়েছে বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, যার মোট ব্যয় ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, বাকি ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে।
এই প্রকল্প সম্পর্কে ড. মাহমুদ বলেন, “বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দর মূলত নদী বন্দর। একটি কার্যকর সমুদ্র বন্দর ছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা সীমিতই থাকবে। বে-টার্মিনাল শুধুমাত্র জাতীয় নয়, আঞ্চলিক গুরুত্বও বহন করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর শুধু কয়লা আমদানির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং এটি নির্মাণ করছে জাপান। যদিও চীন ও ভারতও এটি নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছিল।”
সবমিলিয়ে, উন্নয়ন পরিকল্পনায় বেশ কিছু অগ্রগতি থাকলেও তিস্তা ব্যারাজ নিয়ে এখনও নীতিগত স্তরেই অবস্থান করছে সরকার। পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা, সম্ভাব্যতা যাচাই ও বাস্তবায়নের রূপরেখা ছাড়া প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।