নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে 'দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে' বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এই সময়ের মধ্যে বাহাত্তরের সংবিধানের কিছু সংশোধনী আসবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নির্ধারিত সময়ে সংবিধান প্রণয়ন বা সংশোধন সম্ভব না হলে কোন সংবিধান কার্যকর থাকবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, "৯০ দিনের মধ্যে যদি তারা করতে না পারে তাহলে এক্সিস্টিং কনস্টিটিউশন কন্টিনিউ করবে? এখানে হচ্ছে আমার আপত্তি। জাতীয় সংসদ সংবিধান সংশোধন করে সংবিধান পরিষদ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে, নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে এমন উদাহরণ আছে আট নয় বছর লেগেছে।"
নতুন সংবিধান প্রণয়নে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, "এখন এই জন্য আমি ৭২ সংবিধান কন্টিনিউ করব? নতুন সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান যে সংসদ থাকবে, যে সংসদটা সংবিধান সংসদ হিসেবে কাজ করবে, সে ৭২ এর সংবিধানের প্রয়োজনীয় এমেন্ডমেন্টগুলো করে ফেলবে, এটা আপনাদের ইমপ্রুভ করতে হবে যে গণপরিষদ হিসেবে যখন সে নতুন সংবিধান প্রণয়ণের কাজ করতে থাকবে, এটা করতে আমার ধারণা দুই তিন বছর লাগতে পারে।
"এই দুই তিন বছর কি আমি ৭২ এর সংবিধান গ্রহণ করব? এই দুই তিন বছরের জন্য তারা যখন জাতীয় সংসদ হিসেবে কাজ করবে তখন তারা সংসদের কিছু ফান্ডামেন্টাল এমেন্ডমেন্ট আসবে।" রোববার রাজধানীর মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন আইন উপদেষ্টা। সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে 'নাগরিক কোয়ালিশন'।
সেখানে আসিফ নজরুল বলেন, "আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নজির রয়েছে, এটা খুবই কনস্টিটিউশনাল একটা লেজিটিমেট পদ্ধতি সংসদে, এখানে আপনার সংবিধান পরিষদের কাজকে দায়ী হয়েছে, যখন একটা সংসদ একইসাথে সংবিধান প্রণয়ণের কাজ করে তখন কিন্তু সে খুব অল্প সময় দিতে পারে, যেমন কখনও কখনও এরকম সিস্টেম করা হয় যে সপ্তাহে দুইদিন তারা সংবিধান পরিষদের কাজ করবে বা একটা সেশন বা চারটা সেশন সপ্তাহে করবে, এমনি সে খুব কম সময় পাচ্ছে এরকম একটা সংবিধান পরিষদ যে জাতীয় সংসদ হিসেবে কাজ করবে; সে তার সম্পূর্ণ সময়ের খুব বেশি হলে শতাংশ সময় দিতে পারবে, এরকম একটা সংবিধান পরিষদ ৯০ দিনে সংবিধান রচনা করে ফেলবে? এত দ্রুত? আমার কাছে এটা মনে হয়েছে একটু উচ্চাশা।।"
আইন উপদেষ্টার বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সনদের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “এখানে জুলাই সনদের ওপর টু মাচ এমফেসিস দেওয়া হয়েছে। জুলাই সনদে কি এত কিছুই থাকবে? এটা তো সংবিধানে লিখতে হবে, তাহলে জুলাই সনদ আর হবে নাকি আমার সন্দেহ আছে, জুলাই সনদের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মনে হয়।
"আমরা একটা ধরেই নিয়েছি সবাই জুলাই সনদের উপর অনেক কিছু বিষয়ে একমত হবে। এটা এত সহজ হবে না, হয়ত এমন হতে পারে জুলাই সনদের মোস্ট ফান্ডামেন্টাল জিনিস রাখা সম্ভব হতে পারে। এটা একটু ভেবে দেখেন, বাট নতুন চিন্তা খুবই ভালো।" বিভিন্ন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে গঠিত 'নাগরিক কোয়ালিশনের’ এ আয়োজনের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী ও নাগরিক কোয়ালিশনের সহ-আহ্বায়ক শহিদুল আলম।
অনুষ্ঠানে সংবিধান সংস্কার নিয়ে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, এসব প্রস্তাব কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ ও লেখক জিয়া হাসান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, ঐক্যমত কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এনডিএম সভাপতি ববি হাজ্জাজ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অনেকে।