চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, এর আগে দেশে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। সেবার প্রবাসীরা পাঠান ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১১ মে সময়কালে আসা রেমিটেন্সকে এক অর্থবছরের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ধরা হচ্ছে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মে পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন (২৫৪৬ কোটি) ডলার রেমিটেন্স এসেছে। আগের অর্থবছরের ১১ মে পর্যন্ত রেমিটেন্স আসে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। রেমিটেন্স বাড়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমেছে। ডলারের দামও ‘স্থিতিশীল’। এসব কারণে গত নয় মাস ধরে প্রবাসী আয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, “হুন্ডি ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন জেলে রয়েছেন, অনেকে পলাতক। তাই হুন্ডি ও ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার দরের ব্যবধান কম। ডলার দর স্থিতিশীল হওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আসছে বেশি।” সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিলে রেমিটেন্স আসে পৌনে ৩০০ কোটি ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে; ২৬৪ কোটি ডলার।
এর আগের মাস মার্চে রোজার ঈদ ঘিরে প্রবাসীরা ৩২৯ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা একক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় টানা নয় মাস ২ বিলিয়নের ওপর রেমিটেন্স এসেছে। এতে করে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে মোট রেমিটেন্স আসে ২৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। আর আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১৯ দশমিক ১২ বিলিন ডলার।
আরিফ হোসেন খান বলেন, “চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনে ৯২২ মিলিয়ন ডলার বা ৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।” চলতি বছর জানুয়ারির শেষ দিকে ডলারের দর বাড়তে বাড়তে ১২৮ টাকায় উঠে যায়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ১২৬ টাকা দরেও রেমিটেন্স কেনে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে। এমন প্রেক্ষাপটে জানুয়ারির শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্সের দর সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ঠিক করে দেয়। তবে ব্যাংকগুলোর জন্য এক টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে ডলার কেনাবেচার সুযোগ রাখা হয়। ব্যাংকাররা বলছেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ডলারের দর বেশি থাকায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রেমিটেন্সে।