muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

খেলার খবর

পাঞ্জাবকে হতাশায় ডুবিয়ে অবশেষে আইপিএল কোহলির বেঙ্গালুরুর

পাঞ্জাবকে হতাশায় ডুবিয়ে অবশেষে আইপিএল কোহলির বেঙ্গালুরুর

১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলটায় বাউন্ডারি এড়াতেই বিরাট কোহলি মুখ ঢেকে ফেললেন। ক্যামেরাটা গ্যালারিতে ঘুরে গেল, সেখানে স্ত্রী আনুশকা শর্মা মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন। না, অ্যান্টি ক্লাইম্যাটিক কিছুই হয়নি। ১৮ বছরের অপেক্ষা ঘুচে যাচ্ছে, এ নিশ্চয়তাটা মিলে গেল এই বলটাতেই। সঙ্গে সঙ্গে কোহলি-আনুশকার চোখেমুখে ভর করল অবিশ্বাস! তীব্রভাবে চাওয়া কোনো কিছু পেয়ে যাওয়ার খুব কাছে চলে গেলে বুঝি এমনই লাগে!

সে পরিস্থিতি থেকে শিরোপা জিততে হলে বেঙ্গালুরুকে স্রেফ রুটিন বলগুলো করে গেলেই হতো, আর কিচ্ছু না। আর তাই পরের চার বলে তিন ছক্কা আর একটা চার হজম করাতেও অঘটন কিছু হয়নি। ৬ রানের জয় নিয়ে শেষ হাসিটা বিরাট কোহলির দলই হেসেছে। ১৮ বছরের অপেক্ষা শেষে বেঙ্গালুরু বনে গেছে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন।

আইপিএলের ফাইনালে হারার বেদনা পাঞ্জাবেরও ছিল। ২০১৪ সালের ফাইনালে কলকাতার বিপক্ষে ২০০ ছুঁইছুঁই পুঁজি নিয়েও হারতে হয়েছিল। তবে সে বেদনা বোধ করি বেঙ্গালুরুর চেয়ে বেশি নয়। তিন ফাইনালে হেরেছে দলটা, তার দুবারই আবার ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এক অঙ্কের রানে হার। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালও যদি ধর্তব্যে আনা হয়, তাহলে ফাইনালে হারের বিষাদ ৪ বার সহ্য করতে হয়েছে দলটাকে।

আর এ সবকটা ফাইনালে হার মাঠে থেকে সয়েছেন একজন ক্রিকেটারই, তিনি বিরাট কোহলি। সেই আইপিএলের শুরুর আসরে অর্ধকোটিরও কম রুপিতে তাকে দলে ভিড়িয়েছিল বেঙ্গালুরু। সে থেকে এ পর্যন্ত কত রথী মহারথী দল বদলেছেন, কিন্তু সবকটা টুর্নামেন্টে খেলা একমাত্র খেলোয়াড় কোহলি, যিনি একটি বারের জন্যও দল বদলাননি।

সেই তিনি আজও হিরো। দল ১৯০ করেছে শুরুতে ব্যাট করে। তাতে সবচেয়ে বড় ৪৫ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনিই। তবে তার ইনিংসটার স্ট্রাইক রেট আরও বড় হতে পারত কি না, তা নিয়ে প্রথম ইনিংস শেষেই আলাপ হয়েছে বিস্তর। এ রান করতে তিনি বল খেলে ফেলেছিলেন ৩৫টি। আধুনিক টি-টোয়েন্টির বিচারে তার ইনিংসটি ছিল বেশ মন্থরই।

তবে এরপরও দলটা ২০০'র পথে ছিল, কারণ শুরু থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত যেই উইকেটে এসেছেন, নিদেনপক্ষে দুটো বাউন্ডারি মেরেছেন, দুজন বাদে সবাই ইনিংস সাজিয়েছেন অন্তত ১৬০'র বেশি স্ট্রাইক রেটে। তবে জিতেশ শর্মার ইনিংসটাই বেশি প্রভাব ফেলেছে দলের ইনিংসে। ১০ বলে তিনি খেলেছেন ২৪ রানের ইনিংস। তার ব্যাটই দলকে দেখায় ২০০ রানের দিশা। তার বিদায়ের পর রোমারিও শেফার্ডের ৯ বলে ১৭ রানের ক্যামিও আরেকটূ হলে দুইশো পাইয়েই দিচ্ছিল। কিন্তু শেষমেশ কাইল জেমিসন পথ আগলে দাঁড়ান। শেষ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে বেঙ্গালুরুকে ১৯০ রানে আটকে দেন তিনি।

রানটা অবশ্য এরপরও খুব বড় কিছু ছিল না। প্রথম ইনিংসে চলতি মৌসুমে হায়দরাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে এর চেয়ে কম রান আর হয়নি। রানটা যে যথেষ্ট নয়, তা আরও বেশি মনে হচ্ছিল পাঞ্জাবের ওপেনিং জুটিতে। প্রিয়াংশ আর্য আর প্রাভসিমরান সিং মিলে প্রায় আস্কিং রেট মেনে রান এনে দিচ্ছিলেন পাঞ্জাবকে। দুজন তবু খোলসে বন্দি ছিলেন। তাদের বিদায়ের পর পাঞ্জাব ব্যাকফুটে চলে যায় ইনফর্ম অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার যখন ফেরেন ১ রান করে। ইনিংসের মাঝপথ না পেরোতে দলটার স্কোরবোর্ড দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৭৯। ৬২ বলে তখন প্রয়োজন ছিল ১১২ রান। পাঞ্জাবকে লড়াইয়ে রাখছিলেন জশ ইংলিস, ২৩ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে তিনিও যখন ফিরছেন, তখন দলটার পড়ে যায় ঘোর বিপদে। তাকে বিদায় করেন ক্রুনাল পান্ডিয়া, এর আগে যিনি প্রাভসিমরানকেও দেখিয়েছেন সাজঘরের পথ।

এরপর নেহাল ওয়াধেরার ১৮ বলে ১৫ রানের ইনিংস পাঞ্জাবের স্বপ্নে বড় এক ধাক্কা দেয়। তাতে পাঞ্জাবের সঙ্গে শিরোপার দূরত্বটা ক্রমেই বাড়তে থাকে। এক পাশে শশাঙ্ক সিং ছিলেন বটে, কিন্তু সমর্থন পাননি অন্য পাশ থেকে। মার্কাস স্টয়নিস থেকে আজমতউল্লাহ ওমরজাই, ব্যর্থ হয়েছেন সবাই।

শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। প্রথম দুই বলে দুটো ডটই পাঞ্জাবকে ছিটকে বেঙ্গালুরুকে নিশ্চয়তা দিয়ে দেয়। পরের চার বলে জশ হেইজেলউড যথাক্রমে হজম করেছেন ৬,৪,৬,৬। তবে তাতেও বেঙ্গালুরুর যাত্রা ভঙ্গ হয়নি। ৬ রানের জয় তুলে নেয়, ঠিক এই ব্যবধানেই হেরেই ২০০৯ আইপিএলে ৪ ফাইনাল হারের বউনি হয়েছিল কোহলির। ঠিক সেই ব্যবধানের একটা জয়ই আজ শিরোপায় চুমু আঁকার অধিকার এনে দেয় কোহলিকে। জীবন বুঝি চক্রটা এভাবেই পূরণ করে!

Tags: