ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে নীলনদ আর পিরামিডের দেশ মিশরে উদযাপন হলো পবিত্র ঈদুল আজহা।
আজ শুক্রবার ভোর ৬.২৩ মিনিটে রাজধানী কায়রোর বিখ্যাত আল-আজহার, ইমাম হোসাইন (জাতীয় মসজিদ) আমর ইবনুল আস, সাঈদা জয়নবসহ দেশটির সকল মসজিদ ও বিভিন্ন খেলার মাঠে জামাতে নামাজ আদায় করেন দেশটির নাগরিক সহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা।।
মিশরীয় রীতি অনুযায়ী, ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই 'আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ' ধ্বনিতে মসজিদ-ঈদগাহে আসতে থাকেন মুসল্লিরা। ভোরের আলো ফোটার আগেই পুরুষের সঙ্গে শিশু ও নারীরাও জমায়েত হন।
সূর্যোদয়ের ঠিক ২০ মিনিট পর সারাদেশে একযোগে ঈদের জামাত শুরু হয়। ইমাম প্রথম রাকাতে ৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবীরের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে ইমাম যথারীতি খুতবা দেন। তবে এ দেশে বেশিরভাগ মুসুল্লি নামাজের সালাম ফিরিয়েই মসজিদ ও মাঠ ত্যাগ করতে দেখা যায়।
শাফী মাজহাবের অনুসারী মিশরীয়রা নামাজের পর ইমামের সঙ্গে হাত তুলে মোনাজাত পড়েন না এবং ঈদ উপলক্ষে তাদেরকে বাংলাদেশের মুসুল্লিদের মতো কোলাকুলি করতেও দেখা যায় না।
মিশরে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের নিজ নিজ এলাকার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। দেশটির বিভিন্ন শহরে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই রাজধানী কায়রোর বড় মসজিদ গুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসেন। এবারের ঈদুল আজহায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবিক সংস্থা পশু কিনে কুরবানী করে তার গোস্ত মিশরে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের মাঝে বন্টন করার এক উদ্দ্যোগ নিতে দেখা গেছে। আলহাজ্ব শামসুল হক (আশ) ফাউন্ডেশন ফাউন্ডেশন, ওয়ান ওয়ার্ল্ড উম্মা ফাউন্ডেশন, হাফেজ্বী হুজুর সেবা ফাউন্ডেশন, মাস্তুল ফাউন্ডেশন সহ মিশরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মানবিক সংগঠন গুলোকে উট, গরু, দুম্বা ও ছাগল কিনতে দেখা যায়।
মিশরে ঈদের জামাত শেষ হওয়ার পর পরেই শহরের অলি গলিতে কসাইদের হাঁকডাক শোনা যায়। তারা 'গাজ্জার গাজ্জার' বলে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 'হেদাইয়া' (হাদিয়া) বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোরবানির পশু জবাই করে কেটে দিয়ে যান তারা। একটি খাসি/ দুম্বা জবাই, চামড়া ছাড়ানো ও বড় বড় টুকরো করে কেটে দেওয়ার হাদিয়া বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ হাজার ৫০০। গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে তা ৫ হাজার টাকা।
এ দেশের দাতব্য সংস্থা ও ধনী ব্যক্তিরা কুরবানী ছাড়াও মাংস কিনে গরীবদের মাঝে মধ্যে বিতরণ করে থাকে। এ দিনে সবাই পরিবারপরিজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হলেই 'কুল্লু সানা ওয়া তাতাইব' বলে শুভেচ্ছা জানান, যার অর্থ, 'বছরটি আপনার ভাল কাটুক'।