muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

বাড়তে পারে প্লেনের টিকিটের দাম

বাড়তে পারে প্লেনের টিকিটের দাম

দাম বাড়ানোর কোনো নিয়ামক না থাকলেও সোমবার থেকে জেট ফুয়েলের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, এই দর বৃদ্ধি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রুটে প্লেনের টিকিটের দামে প্রভাব ফেলবে।

সোমবার (১৪ জুলাই) নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বাংলাদেশে একমাত্র পদ্মা অয়েল জেট ফুয়েল সরবরাহ করে।

নতুন দাম অনুযায়ী— দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রতি লিটারে ৯৩ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯৮ টাকা ২ পয়সা করা হয়েছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে প্রতি লিটার ০.৬০৬৬ ডলার থেকে বাড়িয়ে ০.৬৪০১ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জেট ফুয়েলের ওপর শুল্ককর কমিয়ে দেয় সরকার। জেট এ-১ কেরোসিন টাইপ জেট ফুয়েলের ওপর আরোপ করা শুল্ককর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। তবুও কোনো কারণ না দেখিয়েই দামবৃদ্ধি করে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি এয়ারলাইন্সের কোনো রুটে ফ্লাইট পরিচালনার বিভিন্ন খরচের মধ্যে ফুয়েল খরচ প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ। জেট ফুয়েলের দাম বাড়লে প্লেনের টিকেটের দাম বাড়ে, যাত্রী সংখ্যার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেশীয় এয়ারলাইন্স, দেশের পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে যেখানে এয়ারলাইন্সকে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন, সেখানে জেট ফুয়েলে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে বিমান পরিবহন সংস্থাকে। প্রত্যেকটি দেশ যেখানে দেশীয় এয়ারলাইন্সকে টিকেয়ে রাখার জন্য জেট ফুয়েলের মূল্যকে যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করে থাকে সেখানে বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে আকাশপথের চলাচলকে কঠিন করে তুলছে।

এ বছরের মার্চে বিইআরসি কর্তৃক জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণ শীর্ষক গণশুনানিতে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর জেট ফুয়েল সরবরাহকারী একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েলের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ ওঠে। জেট ফুয়েল সরবরাহের জন্য পারটেক্স পেট্রো, ইস্টার্ন রিফাইনারির মতো দেশি কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নভোএয়ারের এমডি মফিজুর রহমান বলেন, একটি উড়োজাহাজের মোট অপারেশনাল কস্টের ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ হচ্ছে ফুয়েল কস্ট। আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে ফুয়েল কিনতে হচ্ছে। তাতে ওভারঅল কস্ট বাড়ছে, যার কারণে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো ব্যাংক্রাপ্ট হচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী ফুয়েলের দাম নির্ধারণের দাবি জানাই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানে বাড়ে, কিন্তু পরে আর কমে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে এখানেও তেলের দাম কমাতে হবে।

বিমানবন্দরে একাধিক তেল সরবরাহকারী রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পদ্মার (পদ্মা অয়েল) মনোপলি থেকে মুক্তি চাই। যদিও এটা কমিশনের ব্যাপার নয়। এজন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ হয় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে। অর্থাৎ তেলের দাম বাড়লে বাড়ানো হয়, কমলে কমানো হয়। বাংলাদেশেও এটি মানার চেষ্টা করা হয়। এজন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) একটি বোর্ড রয়েছে। বোর্ডের প্রধান বিপিসির অপারেশন্স বিভাগের পরিচালক।

অভিযোগ আছে, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম বাড়ে, বোর্ড তখন তেজি ষাঁড়ের মতো জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায়। তবে, দাম কমলে তাদের তৎপরতা তেমন দেখা যায় না। কোনোরকম দায়সারা মূল্য নির্ধারণ করেন তারা।

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি এয়ারলাইন্সের ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ পরিচালন ব্যয় হয় জেট ফুয়েলে। জেট ফুয়েলের দাম যত বেশি, ব্যয়ও তত বাড়ে। যেসব প্রতিষ্ঠান কম দামে তেল কেনে, তাদের পরিচালন ব্যয়ও কম। যাত্রীদের তারা কম দামে টিকিট দিতে পারে। অথচ, বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দাম বেশি হওয়ায় এয়ারলাইন্সগুলোর রাজস্ব দিন দিন কমছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক এভিয়েশন বাজারের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো। যার প্রমাণ রিজেন্ট, জিএমজি ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার পেছনে ‘নিজেদের অতিরিক্ত পরিচালন ব্যয়ের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

Tags: