কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সৈয়দুর রহমানকে হত্যার দায়ে ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুর কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র দায়রা জজ মুহাম্মদ নূরুল আমীন বিপ্লব এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় সাত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি ছয়জন পলাতক রয়েছেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা সবাই আত্মীয়স্বজন। তারা হলেন করিমগঞ্জ উপজেলার দেওপুর কাজিহাটি গ্রামের মরহুম আব্দুল করিমের ছেলে আব্দুর রউফ, আজিজুল হক, মো: আলাউদ্দিন, মো: কালাম মুন্সি ও আয়তুল হক মালাম, আব্দুর রউফের ছেলে হায়দার আলী ও আঙ্গুর মিয়া, আলাউদ্দিনের ছেলে রোয়েল, আজিজুল হকের ছেলে রেজা মিয়া, আলাউদ্দিনের ছেলে রাসেল ও সোহেল, আজিজুল হকের ছেলে রিয়াদ, মরহুম কাইয়ুমের ছেলে জহিরুল ইসলাম।
এ মামলার অন্য এক আসামি আজিজুল হকের ছেলে আব্দুল্লাহ ইহাদ কম বয়সী হওয়ায় তার অভিযোগটি শিশু ও কিশোর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) জালাল উদ্দিন রায়ের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, উপজেলার নিয়াতপুর ইউনিয়নের দেওপুর গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দুর রহমান পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী। তার সাথে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির জায়গা ও সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছিল আসামিদের। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ সকালে আসামিরা বাড়ির সীমানায় গাছের চারা রোপন করলে সৈয়দুর রহমান ও তার ভাতিজা ইজাজুল প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এর জের ধরে ওইদিন রাত ৯টার দিকে ইজাজুল নিয়ামতপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে গেলে সেখানে থাকা আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ সময় স্থানীয়রা ইজাজুলকে উদ্ধার করে ঘটনাস্থলের পাশে সুলতু মিয়ার ফার্মেসিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ওই ফার্মেসিতে ইজাজকে দেখতে যান সৈয়দুর রহমান। সেখানে তার ওপর হামলা চালায় আসামিরা। ফার্মেসি থেকে রাস্তায় ধরে এনে বুকে ছুরিকাঘাত করাসহ নির্যাতন চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈয়দুর রহমানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ২৫ মার্চ নিহত সৈয়দুর রহমানের বড়বোন পারভীন সুলতানা হত্যার উদ্দেশে জখম করার অভিযোগ এনে করিমগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ২৯ মার্চ সৈয়দুর রহমান মারা গেলে মামলাটি হত্যা মামলায় অর্ন্তভূক্ত হয়।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক মো: শহর আলী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।