muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আন্তর্জাতিক

মার্কিন শুল্কে ভারত হারাচ্ছে পোশাক অর্ডার, লাভবান বাংলাদেশ-পাকিস্তান

মার্কিন শুল্কে ভারত হারাচ্ছে পোশাক অর্ডার, লাভবান বাংলাদেশ-পাকিস্তান

ভারতের তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা লেগেছে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্কে। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ভারতীয় রপ্তানিকারকরা এখন হঠাৎ করে অর্ডার হারাচ্ছেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার কাছে। বিশেষত তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুর, কোয়েম্বাটুর ও কারুর টেক্সটাইল শিল্প এলাকা—যেখানে সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন—শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

অর্ডার বাতিলের ধাক্কা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোতে মূল শুল্কের পাশাপাশি জরিমানাস্বরূপ অতিরিক্ত শুল্কও যুক্ত হয়েছে। কিছু নিটওয়্যার পোশাকের ক্ষেত্রে কার্যকর শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৬৪ শতাংশে, যা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় ভারতীয় পণ্যকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামি করে তুলছে। ফলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো ভারত থেকে অর্ডার সরিয়ে নিচ্ছে। কেউ স্থগিত করছে, কেউবা পাকিস্তান ও বাংলাদেশে স্থানান্তর করছে। তিরুপ্পুরের এক রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, তার নিয়মিত মার্কিন অর্ডার সরাসরি পাকিস্তানে চলে গেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের শুল্ক সুবিধা বাংলাদেশ: ৩৫-৩৬% শুল্ক

পাকিস্তান: ১৯%

ভিয়েতনাম: ২০-২১%

কম্বোডিয়া: ৪৯% থেকে কমে ১৯% (আগস্ট ২০২৫ থেকে) এই পার্থক্যেই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।

প্রত্যাশা থেকে হতাশা মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও ভারত–যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও চীন-মিয়ানমারের ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছিলেন রপ্তানিকারকরা। অনেকেই নতুন যন্ত্রপাতি কিনেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের ফলে সেই বিনিয়োগ এখন ক্ষতির মুখে।

অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান সংকটের আশঙ্কা তিরুপ্পুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম সুব্রাহ্মনিয়ান সতর্ক করে বলেছেন, রপ্তানি ১০-২০% কমে গেলে আগামী কয়েক মাসে এক থেকে দুই লাখ মানুষের চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো অন্যান্য বাজার কিছুটা সুরক্ষা দেবে ঠিকই, তবে ক্ষতি ঠেকানো যাবে না।

হোম টেক্সটাইলেও আঘাত শুধু পোশাক নয়, কোয়েম্বাটুর ও কারুর হোম টেক্সটাইল রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাউদার্ন ইন্ডিয়া মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কে সেলভারাজু জানিয়েছেন, বিছানার চাদর ও তোয়ালের মতো মৌসুমি পণ্যের অর্ডার স্থগিত বা বিলম্বিত হচ্ছে, যা সাধারণত অক্টোবরের মধ্যে নিশ্চিত হয়।

নীতি ও করের জটিলতা ভারতীয় তুলার ওপর ১১% আমদানি শুল্ক, পলিয়েস্টারে ১৮%, সুতায় ১২% এবং তৈরি পোশাকে ৫% শুল্ক থাকায় রপ্তানি খরচ আরও ৬-৭% বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে এই ধরনের কর-জটিলতা নেই। ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম বেশি পড়ে, আর ক্রেতারা বিকল্প খুঁজে নিচ্ছেন।

প্রস্তাবিত সমাধান কাঁচামালের ওপর শুল্ক ৫%-এর নিচে নামানো

তুলার আমদানি শুল্ক বাতিল

কৃত্রিম তন্তুর ওপর জিএসটি পর্যালোচনা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব সমাধান নচেৎ ভারতের তৈরি পোশাক খাত স্থায়ীভাবে মার্কিন বাজার হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে, যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশই সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।

পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব ইতোমধ্যে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—অর্ডার কমছে, বিনিয়োগ স্থগিত হচ্ছে, এবং লাখো শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকির মুখে। রাজনৈতিক ও নীতিগত প্রতিবন্ধকতা না সরানো হলে এই ধাক্কা কেবল সাময়িক নয়, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

Tags: