মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ রিপোর্টঃ
দুর্নীতি, অসদাচরণ ও অদক্ষতার দায়ে জামালপুরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. সিরাজুল ইসলামকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর বিধি ৩(এ)(বি) ও (ডি) মোতাবেক তাকে দোষী সাব্যস্ত করে একই বিধিমালার ৪(৩)(ডি) অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।
বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় বরখাস্ত সংক্রান্ত সরকারি আদেশ জারি করে।
দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিম্ন আদালতের চারজন বিচারককে চাকুরি থেকে বরখাস্তের অনুমোদন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরা হলেন, কুমিল্লার সাবেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) এস.এম আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক জেলা জজ মো. রুহুল আমিন খোন্দকার, জামালপুরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. সিরাজুল ইসলাম ও খুলনার সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ মঈনুল হক। বর্তমানে এরা সকলেই আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন।
চাকরিচ্যুত প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (প্রশাসন-১) মো. মাহবুবার রহমান সরকার ইত্তেফাককে বলেন, নিম্ন আদালতের চার বিচারককে চাকুরি থেকে বরখাস্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে একজন বিচারকের বরখাস্তের বিষয়টি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ায় গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বাকি তিন বিচারকের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা হতে সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পরেই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহন করা হবে।
বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি দেখভাল করে জিএ কমিটি। ওই কমিটির প্রধান হলেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। বরখাস্ত হওয়া ওই চার বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলো সুপ্রিম কোর্ট। ওই নির্দেশ মোতাবেক সংশ্লিষ্ট চার বিচারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত করে সেই প্রতিবেদন জিএ কমিটির কাছে পাঠানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জিএ কমিটি গত আগষ্ট মাসে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভায় চার বিচারককে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দেয়। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের ওই অনুমোদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় সিরাজুল ইসলামকে চাকুরি থেকে বরখাস্তের সার-সংক্ষেপ রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠায়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরেই তাকে চাকরিচ্যুত করে সরকারি আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়।
২০০৯ সালে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা জজের দায়িত্ব পালনকালে সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, মামলায় সম্পৃক্ত আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা একাধিক দুর্নীতি ও অসদাচরনের অভিযোগ উত্থাপন করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। এজলাস কক্ষে বিচার চলাকালে একটি মামলার বাদিনী মালা রাউথ প্রতিপক্ষের আইনজীবী ও অতিরিক্ত পিপি সুদীপ দে মিঠুকে বিচারকের প্রচ্ছন্ন ছত্রছায়ায় চড় মেরে অপদস্থ করেন। গৃহপরিচারিকার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক এবং তার স্বামী একটি মামলায় জামিনে থাকা সত্ত্বেও পুলিশি হয়রানি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে এই বিচারকের বিরুদ্ধে, যা পরবর্তীতে তদন্তে প্রমাণিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম / ০৬-১০-২০১৬ ইং/মোঃ হাছিব
Tags: