যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন। রাজার বক্তব্যে ইউক্রেনকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। রাজা চার্লসের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ট্রাম্পও যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্ককে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত ১৬০ জন অতিথির জন্য জাঁকজমকপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ভোজে দুই দেশের গভীর বন্ধন, সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্কের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। রাজা চার্লস বলেন, “আমাদের প্রিয় মূল্যবোধ রক্ষার জন্য জনগণ একসঙ্গে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে।” ট্রাম্প এই বক্তব্যের প্রশংসা করে উভয় দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
রাষ্ট্রীয় সফরের অংশ হিসেবে ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এছাড়া প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ভবিষ্যতে তারা বিশ্বের জন্য অসাধারণ সফল নেতা ও দীপ্তিময় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করবেন।
সফরের আনুষ্ঠানিক অংশে ট্রাম্প উইন্ডসর ক্যাসলের গার্ড অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন, রাজকীয় কুচকাওয়াজে অংশ নেন এবং সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল ও রাজকীয় সংগ্রহশালায় দর্শন করেন। এছাড়া প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের রাষ্ট্রীয় সফর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট একই দেশে দুটি রাষ্ট্রীয় সফর করেননি। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন ট্রাম্প ও মেলানিয়া।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে এই আয়োজনকে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রাজপরিবারের সঙ্গে ট্রাম্পের উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সফরের সফলতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
নিরাপত্তার জন্য রাজপ্রাসাদের আশপাশে ১,৬০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১,৩০০ সদস্য এবং শতাধিক ঘোড়াও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। ট্রাম্পের সফর কেবল জাঁকজমকপূর্ণ নয়, এটি দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের গভীরতা প্রমাণ করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমানে ইউক্রেন, রাশিয়া, চীনা ও মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে এভাবে স্বাগত জানানোর উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ধরে রাখা।
এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে রাজপরিবারের ঐতিহ্য, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এবং রাজনৈতিক প্রভাব একসাথে প্রদর্শিত হয়েছে।