muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

করিমগঞ্জ

জন্মের পরদিন থেকেই দুধ দিচ্ছে ১৭ দিনের বাছুর

জন্মের পরদিন থেকেই দুধ দিচ্ছে ১৭ দিনের বাছুর

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম হঠাৎ করেই সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। কারণ—মাত্র ১৭ দিনের এক বাছুর দুধ দিচ্ছে। যে বয়সে তাকে মায়ের দুধ খেয়ে টিকে থাকার কথা, সে বয়সেই তার দুধ দোহন করছেন মালিক। ঘটনাটি গ্রাম ছাড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে বিস্ময় আর কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

কৃষক মো. হারুন অর রশিদের বাড়ি এখন ভিড়ে ঠাসা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিশোর থেকে প্রবীণ—সব বয়সী মানুষ ছুটে আসছেন বিরল এই দৃশ্য দেখতে।

হারুন জানান, প্রায় দুই বছর আগে ৭৫ হাজার টাকায় তিনি গাভীটি কিনেছিলেন। সম্প্রতি ওই গাভী একটি বাছুর প্রসব করে। জন্মের প্রথম দিন থেকেই সেই বাছুরের থনে দুধ জমতে শুরু করে। তিনি ও তাঁর পরিবার প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি। পরে নিয়মিত দোহন করতে থাকেন।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা এমন কিছু জীবনে দেখিনি। মা ও বাছুর একইসাথে দুধ দিচ্ছে—এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।”

বাংলাদেশে দুধ উৎপাদন ও পশুপালনে নানা বিচিত্র ঘটনা শোনা গেলেও এ ধরনের নজির প্রায় নেই বললেই চলে। করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এম এম এ আউয়াল তালুকদার ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। তাঁর ভাষায়, “এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা। সাধারণত জন্মের কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কোনো বাছুরের দুধ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকে না। এখানে সম্ভবত হরমোনের অস্বাভাবিক সক্রিয়তার কারণে এমনটা ঘটছে।”

তিনি ধারণা করছেন, মিল্কবিট লেয়ারের বিশেষ হরমোনগুলো জন্মের পরপরই সক্রিয় হয়ে পড়েছে। এতে করে বাছুরের স্তন্যগ্রন্থি দ্রুত বিকশিত হয়ে দুধ উৎপাদন শুরু করেছে। তবে এটি প্রকৃতির আকস্মিক জৈববিক বিকৃতি নাকি অন্য কোনো জেনেটিক কারণ, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

ঘটনাটি নিয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ইতিমধ্যেই একটি গবেষণা কমিটি গঠন করেছে। মা গাভী ও বাছুরের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছে একটি মেডিকেল টিম। এ ছাড়া দুধের মান ও নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওই দুধও অন্যান্য গাভীর দুধের মতোই স্বাভাবিক এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন।

গ্রামবাংলার মানুষের কাছে এ ঘটনা শুধু বিস্ময় নয়, একধরনের আনন্দ ও গর্বও বয়ে এনেছে। স্থানীয় এক কলেজছাত্রী সাবিহা রোবার ভাষায়, “এমন ঘটনা হয়তো আমরা টেলিভিশনে বিদেশি ডকুমেন্টারিতে দেখি। কিন্তু আমাদের গ্রামে ঘটছে, এটা ভেবে গর্ব হচ্ছে।”

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, অনেকেই মন্তব্য করছেন এটি “প্রকৃতির খেয়াল”। কেউ আবার কৌতুক করে লিখেছেন, “এখন থেকে গরু ও বাছুর দুজনকেই দোহন করতে হবে।”

পশু চিকিৎসকরা অবশ্য কেবল বিস্ময়ের দিকেই দৃষ্টি দিতে নারাজ। তাঁদের মতে, এ ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা প্রজনন স্বাস্থ্য ও জেনেটিক বৈচিত্র্যের জটিল ইঙ্গিতও হতে পারে। ফলে বৈজ্ঞানিকভাবে এর সঠিক ব্যাখ্যা জরুরি।

করিমগঞ্জের এক প্রবীণ কৃষক আক্কাছ মিয়া বললেন, “আমাদের সময়ে শুনতাম অদ্ভুত সব কাহিনি, কিন্তু আজকাল বিজ্ঞানের যুগে বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি। তবে যদি সত্যিই গবেষণায় প্রমাণ হয়, তাহলে হয়তো নতুন কিছু শিখতে পারবে দেশ।”

একটি গ্রামের উঠোন থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনা এখন জাতীয় কৌতূহলে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির ব্যতিক্রমী আচরণ নাকি জৈববিজ্ঞানের এক নতুন ইঙ্গিত—এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো দেবে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গবেষণা। তবে আপাতত পূর্ব চরকরণশী গ্রামের মানুষজন এই বিরল বাছুরটিকেই “তারকা” বানিয়ে দিয়েছে।

Tags: