মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিসা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। নতুনভাবে চালু করা হয়েছে চার ধরনের ভিজিট ভিসা, পাশাপাশি বেশ কিছু পুরনো ভিসার শর্ত ও মেয়াদেও সংশোধন আনা হয়েছে।
দেশটির পরিচয়, নাগরিকত্ব, শুল্ক ও বন্দর নিরাপত্তা বিভাগ (আইসিপি) জানিয়েছে, এসব উদ্যোগ মূলত বিশ্বজুড়ে মেধাবী জনশক্তি, বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তি, পর্যটন ও বিনোদন খাতকে আরও গতিশীল করাই প্রধান লক্ষ্য।
আইসিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সুহাইল সাঈদ আল খাইলি জানান, স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাস্তবতা পর্যালোচনা করেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নতুন চার ভিজিট ভিসা
১. এআই বিশেষজ্ঞ ভিসা– প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর পেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতের বিশেষজ্ঞরা একক বা একাধিকবার প্রবেশের সুযোগসহ নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিসা পাবেন।
২. বিনোদন ভিসা– পর্যটন ও বিনোদনমূলক ভ্রমণের জন্য এ ভিসা দেওয়া হবে।
৩. অনুষ্ঠান ভিসা– সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া, উৎসব, প্রদর্শনী বা সম্মেলনে অংশ নিতে এই ভিসা মিলবে। তবে আয়োজক প্রতিষ্ঠান (সরকারি বা বেসরকারি) থেকে চিঠি লাগবে।
৪. ক্রুজ জাহাজ কর্মী ভিসা– ক্রুজ জাহাজে পর্যটক আনা-নেওয়ার কাজে যুক্ত কর্মীদের একাধিকবার প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে। এজন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে জামিনদার হতে হবে এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
অন্যান্য ভিসায় পরিবর্তন
মালবাহী ট্রাক চালকের ভিসা: স্পন্সর প্রতিষ্ঠান থাকলে একক বা একাধিকবার প্রবেশের সুযোগ মিলবে। শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট ফি, আর্থিক নিশ্চয়তা ও স্বাস্থ্যবীমা রাখতে হবে।
আত্মীয় ও বন্ধু ভিসা: কাছের আত্মীয় আনতে জামিনদারের মাসিক আয় কমপক্ষে ৪ হাজার দিরহাম হতে হবে। দূরআত্মীয়দের ক্ষেত্রে ৮ হাজার এবং বন্ধুর জন্য আয় হতে হবে ন্যূনতম ১৫ হাজার দিরহাম।
ব্যবসা স্থাপনের ভিসা: প্রস্তাবিত ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করতে হবে। অন্য দেশে একই ধরনের ব্যবসা বা অভিজ্ঞতার দলিল থাকলেও ভিসা মিলবে।
মানবিক ও বিশেষ সুবিধা
মানবিক ভিসা: যুদ্ধ, দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের নাগরিকরা এক বছরের মানবিক ভিসা পাবেন। মহাপরিচালকের অনুমতিতে অনেক ক্ষেত্রে জামিনদার ছাড়াই বসবাসের অনুমতি দেওয়া বা নবায়ন করা যাবে। তবে ভিসাধারী দেশ ছেড়ে গেলে অনুমতি বাতিল হবে।
স্বামীহারা বা বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারী: স্বামী মারা গেলে বা বিচ্ছেদ হলে বিদেশি নারীরা নির্দিষ্ট শর্তে স্পন্সর ছাড়াই বসবাসের সুযোগ পাবেন। আমিরাতি নাগরিক স্বামীর ক্ষেত্রে মৃত্যু বা বিচ্ছেদের ছয় মাসের মধ্যে সন্তানহীন স্ত্রী এ সুবিধা নিতে পারবেন।
বিদেশি স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে: সন্তানদের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্ত্রী নির্দিষ্ট শর্তে একই সুবিধা পাবেন। তবে আমিরাতের ভেতরে থাকতে হবে এবং বিচ্ছেদ বা মৃত্যুর সময় স্বামীকেই স্পন্সর হতে হবে।
সব ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতা ও থাকার উপযুক্ত জায়গার শর্ত পূরণ করতে হবে। যথাযথ কারণ থাকলে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোও সম্ভব।