মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। ২০২৫ সালের অক্টোবর থেকে বিদেশি কর্মীদের জন্য ‘কর্মচারী ভবিষ্যনিধি তহবিল’ (EPF) দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়া গেজেটের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অক্টোবর মাসের বেতন থেকে এই নীতি কার্যকর হবে এবং নভেম্বর ২০২৫ থেকে ইপিএফ-এ নিয়মিত জমা শুরু হবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, একজন কর্মচারী ও তার নিয়োগকর্তা—উভয়েই মাসিক বেতনের ২ শতাংশ করে ইপিএফে জমা দেবেন। ফলে বিদেশি কর্মীদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি অবসর সঞ্চয়ের পথ উন্মুক্ত হবে, যা অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে এই সুবিধার আওতার বাইরে থাকবেন গৃহকর্মীরা। ইপিএফ জানিয়েছে, এই সুবিধা পেতে হলে বিদেশি কর্মীদের অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট ও মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত ওয়ার্ক পাস থাকতে হবে।
ইপিএফ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জুলকারনাইন ওন বলেন, অভিবাসী কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক অবদান দেশের সামাজিক সুরক্ষা এজেন্ডাকে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ন্যায্য শ্রমবাজার নিশ্চিত করবে। সব জাতীয়তার কর্মীদের জন্য অবসরকালীন সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি করবে।
তিনি জানান, নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বিদেশি কর্মী সংগঠন, নিয়োগকর্তা প্রতিনিধি ও এনজিওদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন বিভাগের সঙ্গে ডেটা ও সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন উন্নত করার কাজ চলছে।
ইপিএফ জানিয়েছে, যেসব নিয়োগ কর্তা এখনও নিবন্ধিত হননি, তাদের দ্রুত নিবন্ধনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিবন্ধন অনলাইনে ইপিএফ ওয়েবসাইটে বা দেশের যেকোনো ইপিএফ অফিসে করা যাবে।
অস্থায়ী ওয়ার্ক ভিজিট পাস ও কর্মসংস্থান পাসধারী বিদেশি কর্মীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কর্মীদের ইপিএফ অফিসে গিয়ে থাম্বপ্রিন্ট আপডেট করতে হবে।
নিয়োগকর্তারা আই-আকাউন (Employer) প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। অন্যান্য পাসধারীদের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে ইপিএফ অফিসের মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে।
অধিক তথ্যের জন্য ইপিএফ-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ‘অভিবাসী কর্মীদের জন্য অবদান-(EPF) মালয়েশিয়া’ শীর্ষক বিশেষ পেজে ভিজিট করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ পদক্ষেপটি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করবে। এতদিন বিদেশি কর্মীরা ইপিএফ সুবিধার বাইরে ছিলেন, ফলে তাদের অবসরোত্তর আর্থিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকত। নতুন নীতি কার্যকর হলে প্রায় ২০ লাখের বেশি বৈধ বিদেশি কর্মী এর সুবিধা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। নিয়োগকর্তাদের সময় মতো নিবন্ধন, তথ্য হালনাগাদ ও সঠিক অবদান প্রদানের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। এজন্য ইপিএফ ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন বিভাগ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করছে।
সব মিলিয়ে, বিদেশি কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক ইপিএফ অবদান শুধু সামাজিক সুরক্ষা নয়, বরং মালয়েশিয়ার শ্রমনীতি সংস্কারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।