বিদেশে যেতে না পারায় মাইক ভাড়া করে এলাকাবাসীকে গালাগাল করছেন এক যুবক। এমন একটি ভিডিও মোবাইলে রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেই ছেড়ে দিয়েছেন সারোয়ার হোসেন রাব্বি নামের ওই যুবক। মুহুর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়। ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পানান গ্রামের।
গত শুক্রবার দুপুর ২টার সময় ভিডিওটি সারোয়ার হোসেনের আইডিতে পোস্ট করা হয়।
পোস্ট করা ভিডিও’র ক্যাপশনে সারোয়ার হোসেন লিখেন, প্রথমেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন, কারন এই ভিডিওতে আমি অনেক খারাপ ভাষায় গালাগাল করেছি, এই জন্য আমি আবারও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।'
আমি কেন এমন করেছি শুনুন, আমি সৌদি আরবে যাবো গত চার মাস যাবত চেষ্টা করেছি কিন্তু আমার কাছে ১ লাখ টাকা না থাকার কারনে যেতে পারছি না। গত এই ১ মাসে আমি বিভিন্ন সমিতির কাছে লোনের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু সব কিছু ঠিক থাকার পর যেদিন সমিতির লোক আমাকে টাকা দেবে সেদিন কেউ না কেউ আমার নামে উল্টা পাল্টা বলে ওদের কে নিষেধ করে আসে আমাকে লোন না দেওয়া জন্য। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমার কাছে কেউ এক টাকা পাবে না, কারোর টাকা মেরে খাইনি। কোনো দিন জেনে বুঝে কারোর ক্ষতি করিনি। তাহলে কেন আমার সাথে এমন বৈষম্য করে আমার এলাকার লোক? যদি কারোর সাথে আমার ব্যক্তিগত সমস্যা থাকে তাহলে আমার সাথে আসুন, বসুন তারপর কথা বলুন আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি। আমার যদি কোনো অপরাধ থাকে তাহলে আমি আমার শাস্তি মাথা পেতে মেনে নিব, কিন্তু আমার সাথে কেন এমন করছেন আপনারা? আমার কি অন্য ছেলেদের মত স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করার অধিকার নেই? আমার একটা ছোট ছেলে আছে তার একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার সুযোগ দিন। আজ আপনাদের কারণে আমার ভিসা ও মেডিকেল এর মেয়াদ শেষের পতে, আমি আরো দুইবার বিদেশ যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আমার অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করে ফেলেছি। আবারও যদি আমি ব্যর্থ হয় আমার পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। আজ আমি অনেক কষ্টে এমন কাজ করেছি। আমি পারতেসি না শুধু আমার বুকটা ছিড়ে আপনাদের কে দেখতে। আমাকে আপনারা ক্ষমা করেবেন।
ভিডিওতে দেখা যায় একজন ভিসা’র কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সারোয়ার হোসেন ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় মাইক হাতে বসে আছেন। তিনি বলছেন, আমার নাম সারোয়ার হোসেন রাব্বি। এলাকার মানুষ আদর করে বাপ্পি নামে ডাকে। আমাকে কিস্তি দেওয়ার জন্য ১৩জনকে বাড়িতে এনেছি। ১৩জনকেই কোন হৃদয়বান ব্যক্তি ভাংতি (না) করে দিয়েছে। এরপর অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। এরপর হাতে ভিসা নিয়ে বলেন, এইযে আমার ভিসা এই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এক লাখ টাকার জন্য বিদেশ যেতে পারছি না। যতজন লোক কিস্তি দিতে আসে তাদের না করে দেয়। আমি যদি লুকিয়ে বিয়ে না করতাম তাহলে মনে হয় বিয়েও করতে পারতাম না। বিয়েতেও ভাংতি দিতো। এলাকার একটা মানুষকে উন্নত হওয়ায় জন্য দেয় না। তাই রাগে ৫০০ টাকা দিয়ে মাইক ভাড়া করে আনছি গালাগাল করার জন্য। এসময় সারোয়ার হোসেনের এক বন্ধুও গালাগাল করেন।
মুঠোফোনে সারোয়ার হোসেন বলেন, এক লাখ টাকার জন্য বিদেশ (সৌদি) যেতে পারছি না। তাই কষ্টে এমনটা করেছি। ৫০০ টাকা দিয়ে মাইক ভাড়া করেছি। আরও দুইবার ভিসা নষ্ট হয়েছে মানুষের কারণে যেতে পারিনা। আমার কাছে কেউ কোন ঋণ পাবে না। আমার এলাকার মানুষ খুব খারাপ। মানুষের বিয়েতেও ভাংতি দেয়। খুব আক্ষেপে এমনটা করেছি। আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আমার মা, বউ-বাচ্চা আছে, বাবা মারা গছে। ৩০ অক্টোবর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। প্রবাসী কল্যান ব্যাংকে গেলে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ চাই। আমি দিতে রাজি না। তাই টাকাও পাচ্ছি না। আমার এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে বলার ভাষা নাই। আমি এক সময় অটোরিক্সা চালাইতাম। পরে বিকাশের ব্যবসা দিয়েছিলাম সেখানেও মানুষের কাছে বাকি আছে। টাকা তুলতে পারছি না।