রুদ্ধশ্বাস সুপার ওভারে হেরেই গেলো বাংলাদেশ। ১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে প্রথম বলেই চলে এসেছিল ৫ রান (নো-বলের সুবাদে)। কিন্তু পরের ৫ বলে ৪ রানের বেশি নিতে পারলো না। হারলো ১ রানে।
মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এই সুপার ওভারের লড়াই জিতে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এর আগে মূল ম্যাচে শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল মাত্র ৫ রান। পার্টটাইম অফস্পিনার সাইফ হাসানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সেই সাইফই দেখান ঝলক। একটি উইকেটসহ ইনিংসের শেষ ওভারে দেন মাত্র ৪ রান। ফলে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে বল হাতে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে নামেন শাই হোপ আর শেরফান রাদারফোর্ড। প্রথম বলে সিঙ্গেলস নেন হোপ। কিন্তু পরের বলেই বড় শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারিতে মিরাজের লো ক্যাচ হন রাদারফোর্ড।
মোস্তাফিজ বেশ নিয়ন্ত্রিত বল করেন। পরের তিন বলে দেন ৫ রান। কিন্তু শেষ বলে চার মেরে দেন হোপ। ১ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১০ রান।
সুপার ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১১। ক্যারিবীয়দের বল হাতে নেন বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে নামেন সাইফ হাসান আর সৌম্য সরকার। প্রথম বলেই নো। ফলে ফ্রি-হিটসহ ৫ রান পায় বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় বলে ডট, তৃতীয় বলে মাত্র ১ নিতে পারেন সাইফ। চতুর্থ বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পঞ্চম বলে তার পায়ে হয় এক রান লেগ বাই। শেষ বলে সাইফ এক রানের বেশি নিতে পারেননি।
ক্যারিবীয়দের লক্ষ্য ছিল ২১৪ রানের। ইনিংসের তৃতীয় বলেই আঘাত হানেন নাসুম আহমেদ। গোল্ডেন ডাকে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ব্রেন্ডন কিং। ১ রানেই প্রথম উইকেট হারায় সফরকারি দল।
এরপর কিয়েসি কার্টি আর আলিক আথানাজে জুটি গড়েন তোলেন। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। অবশেষে ১৪তম ওভারে আগের ম্যাচের নায়ক রিশাদ হোসেনের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মিরাজ। বল হাতে নিয়েই ৫১ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ, এলবিডব্লিউ করেন আথানেজেকে (৪২ বলে ২৮)।
তবে কার্টি এবার অভিষিক্ত আখিম অগাস্টেকে নিয়ে আবার জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। ৩০ রানের সেই জুটি ভাঙে রিশাদের বলেই। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হন কার্টি (৫৯ বলে ৩৫)।
তানভীরের বলে অগাস্টের সজোরে হাঁকানো বল স্কয়ার লেগে দারুণ দক্ষতায় ধরে ফেলেন রিশাদ। আঙুলে ব্যথাও পান। অগাস্টে করেন ২৯ বলে ১৭।
গুদাকেশ মোতিকে (২১ বলে ১৫ বোল্ড করেন রিশাদ।
১২৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে বলতে গেলে ছিটকে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর রস্টন চেজ ১১ বলে ৫ করে নাসুমের দ্বিতীয় শিকার হন। বল ব্যাটে লেগে উইকেটরক্ষকের কাছে গেলেও আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে জেতে বাংলাদেশ।
কিন্তু হাল ছাড়েনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জাস্টিন গ্রেভসকে নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে যান শাই হোপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিটাই (৪৪ রানের) আসে অষ্টম উইকেটে।
অবশেষে রানআউটে ভাঙে এই জুটি। তানভীরের বল কভারে ঠেলেই দ্রুত সিঙ্গেলস নিতে গিয়েছিলেন শাই হোপ। সরাসরি থ্রোতে স্ট্রাইকিং এন্ডে স্টাম্প ভেঙে দেন মিরাজ। গ্রেভস ফেরেন ৩৯ বলে ২৬ করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য তখন দরকার ৩১ বলে ৩৭। হাতে মাত্র ২ উইকেট। সেই জায়গা থেকে হোপ দলকে টেনে শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে যান। ৬৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
রিশাদ হোসেন ৪২ রানে নেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নাসুম আহমেদ ও তানভীর ইসলামের।
এর আগে মিরপুরের ঘূর্ণি পিচে সবাই সংগ্রাম করেছেন। তবে এক সাইফ হাসান ছাড়া বাংলাদেশের সব ব্যাটার দুই অংক পেরিয়েছেন। শেষদিকে এসে তো বরাবরের মতো ঝড় তুলেছেন রিশাদ হোসেন। যে ক্যামিওতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ২১৩ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
শেরে বাংলায় টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ওপেন করেন সাইফ হাসান আর সৌম্য সরকার। সাইফ আরও একবার ওয়ানডেতে ব্যর্থ। ওপেনিং জুটিতে ২২ রান আসলেও সাইফ ফিরে যান ১৬ বলে মাত্র ৬ করে। সেট হয়ে আউট হন তাওহিদ হৃদয় (১৯ বলে ১২)।
একইভাবে সেট হয়ে শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত (২১ বলে ১৫), মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (৩৫ বলে ১৭)।
সৌম্য আজ ভালো খেলছিলেন, কঠিন উইকেটে ছিলেন ফিফটির দোরগোড়ায়। কিন্তু তিনিও বড় শট খেলতে গিয়ে হাফসেঞ্চুরি মিস করেন। ৮৯ বলে ৪৫ রানের ইনিংসে ৩টি বাউন্ডারি আর ১টি ছক্কা হাঁকান সৌম্য। ১০৩ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
মেহেদী মিরাজ আর নাসুম আহমেদ যোগ করেন আরও ২৫ রান। ভাঙা পিচে ছক্কা হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল নাসুমের। ওই ওভারেই গুদাকেশ মোতির ঘূর্ণিতে ব্যাট পেতে দিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। ২৬ বলে ১৪ করে ফেরেন নাসুম।
উইকেটে এসেই ব্যস্ততা দেখাতে থাকেন নুরুল হাসান সোহান। ঘূর্ণি পিচেও বেশ কয়েকটি ভালো শট খেলেন তিনি। ফলে সপ্তম উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ ৩৩ রান আসে ৪২ বলে। ২ চার আর ১ ছক্কায় বল সমান ২৩ রান করে মোতিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সোহান।
এরপরের গল্পটা শুধুই রিশাদ হোসেনের। যে পিচে ব্যাটাররা ধুঁকেছেন। সেই পিচে ১৪ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩৯ রানের ক্যামিও উপহার দেন রিশাদ। মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৫৮ বলে ৩২ করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের গুদাকেশ মোতি ৩টি আর আকিল হোসেন ও অলিক আথানেজে নেন ২টি করে উইকেট।