muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

তথ্য প্রযুক্তি

গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যয় বাড়বে ২০ শতাংশ

গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যয় বাড়বে ২০ শতাংশ

সরকারের প্রস্তাবিত টেলিকম নীতিমালা কার্যকর হলে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম গড়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। সংস্থাটির মতে, নতুন গাইডলাইনে অতিরিক্ত ফি, রাজস্ব ভাগাভাগি ও সামাজিক তহবিলের বাধ্যবাধকতা আরোপের ফলে শুধু সেবা খরচই বাড়বে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনাও।

গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের স্কাইলাইন রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে আইএসপিএবি। এ সময় সংগঠনের সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে সরকার তার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছে। নতুন নীতিমালা জনগণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি বৈষম্য তৈরি করবে এবং ইন্টারনেটের দাম সরাসরি বাড়াবে।

৪০ শতাংশ রাজস্ব সরকারের হাতে যাবে : আমিনুল হাকিম বিদ্যমান ও প্রস্তাবিত নীতিমালার তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে বলেন, বর্তমানে সরকার রেভিনিউ শেয়ার, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল ও ভ্যাটসহ ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ রাজস্ব পায়। কিন্তু নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে সেটি বেড়ে দাঁড়াবে ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশে। তাঁর মতে, এভাবে অতিরিক্ত রাজস্ব নেওয়া হলে শেষ পর্যন্ত তার ভার বইবে গ্রাহকরা, যা শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য আরও বাড়বে।

স্টারলিংকের তুলনায় বেশি চাপ : আমিনুল হাকিম অভিযোগ করেন, প্রস্তাবিত গাইডলাইনে বিদেশি প্রতিষ্ঠান স্টারলিংককে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। স্টারলিংকের লাইসেন্স ফি ১০ হাজার ডলার বা ১২ লাখ টাকা ধরা হলেও, দেশীয় আইএসপিদের দিতে হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। আমরা জানতে চাই, এই বৈষম্যের কারণ কী?Ñ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

অসাম্য প্রতিযোগিতা ও বৈষম্যপূর্ণ নীতি : আইএসপিএবি জানায়, নতুন গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (এফডব্লিউএ) ও ‘লাস্ট মাইল’ ফাইবার সংযোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা দেশীয় আইএসপিদের সঙ্গে সরাসরি অসম প্রতিযোগিতা তৈরি করবে। সংগঠনের নেতাদের ভাষায়, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল চালিকা শক্তি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আইএসপিগুলো ধ্বংসের মুখে পড়বে।

ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষা ও ব্যবসা : আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে জানান, নতুন নীতিতে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার ও ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে (এসওএফ) অর্থ প্রদানের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া লাইসেন্স নবায়নে ফি বাড়ানো হয়েছে আড়াই গুণ আর বার্ষিক ফি সাড়ে তিন গুণ পর্যন্ত। এর ফলে ঢাকায় ইন্টারনেট খরচ বাড়বে গড়ে ১১ শতাংশ এবং গ্রামে প্রায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। তিনি বলেন, ইন্টারনেট এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রাণশক্তি। এর মূল্যবৃদ্ধি মানে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা মন্থর হওয়া।

বিটিআরসি কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি : সংবাদ সম্মেলনের পর বিকালে বিটিআরসি ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আইএসপি উদ্যোক্তারা। তারা দাবি জানান, টেলিকম খাতের খসড়া নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করে জনগণের স্বার্থে বাস্তবসম্মত সংস্কার আনা হোক।

সাত দফা প্রস্তাব : সংগঠনটি গাইডলাইন সংশোধনের জন্য সাতটি প্রস্তাব দিয়েছে। এক. মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (এফডব্লিউএ) সেবা বাতিল করা। দুই. হোম ও অফিস পর্যায়ে ফাইবার সংযোগ স্থাপনের অনুমতি প্রত্যাহার। তিন. ওয়াইফাই ব্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। চার. এফটিএসপি অবকাঠামো শেয়ারিং গাইডলাইন স্পষ্ট করা। পাঁচ. ৫.৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার ও ১ শতাংশ এসওএফ বাতিল বা পুনর্বিবেচনা করা। ছয়. আইপিটিএসপি এসএমএস ও মোবাইল ডায়ালার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা। সাত. জেলা ও কেন্দ্রীয় এফটিএসপি লাইসেন্সের মধ্যে বৈষম্য দূর করা।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কামনা : গ্রামীণ আইএসপিগুলোর টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আমিনুল হাকিম বলেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে তিন মাসের মধ্যেই গ্রামের বহু আইএসপি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে জনগণের এই স্বার্থরক্ষার লড়াইয়ে পাশে দাঁড়াক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইএসপিএবির সহ-সভাপতি নেয়ামুল হক খান, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব আলম ও ফুয়াদ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমেদ এবং পরিচালকবৃন্দ রাশেদুর রহমান, মোহাম্মদ মিঠু হাওলাদার ও সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।

Tags: