অনলাইন জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, এমএফএস অ্যাকাউন্ট, জাতীয়পরিচয়পত্র, ওয়েবসাইটের অপারেশনাল কার্যক্রম মনিটরিং ইত্যাদি বিষয়গুলোকে একটি পরিকাঠামোয় এনে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের প্রস্তাবনা নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমশ বাড়ছে জুয়ার কার্যক্রম। এতে বিদেশে অর্থপাচারসহ হুমকির মুখে তরুণ সমাজ। তাই অনলাইনে জুয়া, বেটিং এবং পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধে করণীয় বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মোবাইল অপারেটর এবং মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে নিয়ে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, অনলাইন প্রতারণা, জালিয়াতি ও জুয়া বন্ধে একজন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র, সিম নম্বর এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট-তিনটিকে সমন্বতিভাবে যাচাই করা হবে।
বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে জুয়া বন্ধে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক স্থিরতা বজায় রাখা, যুব সমাজের অবক্ষয় রোধ এবং অর্থপাচার বন্ধে একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাদের নিয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে বেটিং সাইট ব্রাউজকারীকে শনাক্ত করাসহ এমএফএস অপারেটরগুলোর যেসব অ্যাকাউন্টে লেনদেন সন্দেহজনক তা বিশ্লেষণ সাপেক্ষে ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।
বিটিআরসি,আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব স্টেকহোল্ডারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে জানিয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) বলেন, জুয়া ও আর্থিক প্রতারণা শনাক্তে বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে সাবস্ক্রাইবার ডাটা ভেরিফিকেশন প্ল্যাটফর্ম (এসডিভিপি) সিস্টেম তৈরির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
মোবাইল সিম সংখ্যা কমিয়ে আনাসহ এনইআইআর সিস্টেম কার্যকর হলে জুয়া কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন থেকে আগত প্রতিনিধি জানান, নির্বাচন কমিশন ও বিটিআরসি মিলে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া, ডুপ্লিকেশন এড়াতে স্মার্ট আইডি ও পুরোনো আইডি ম্যাপিং নিয়ে কাজ শুরু হচ্ছে বলেও জানান তারা।
জুয়া শনাক্তে ক্রলিং ইঞ্জিন তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে মোবাইলফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, প্রতিনিয়ত জুয়ায় জড়িত থাকা নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হচ্ছে এবং ফোন নম্বরের বিপরীতে বিদ্যমান জাতীয় পরিচয়পত্র কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
শীর্ষ জুয়া সাইটগুলো অ্যাডভান্সড এআই লিংকের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, নজরদারি এড়াতে উক্ত সাইটগুলো আইপি ঠিকানা গোপন করা এবং ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কসহ ক্রেডেনসিয়াল বন্ধ করে দেয়। সেন্ট্রাল পোর্টাল চালুর মাধ্যমে সিমসহ এনআইডি কালো তালিকাভুক্ত করে সেটা সবখানে ছড়িয়ে দিলে অপরাধী অনেকাংশে হ্রাস পাবে ।
ডিজিএফআই এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিটিআরসিকে ফোকাল পয়েন্ট রেখে একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করতে হবে এবং একইসাথে জুয়া বন্ধে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্স (এনএসআই) প্রতিনিধিরা সভায় অবগত করেন যে, দেশীয় চক্রের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে একটি চক্র যুক্ত হয়ে অনলাইনে অপরাধ করে যাচ্ছে। তারা বিদেশে বসে কলসেন্টার চালু করে জুয়া ও বেটিংয়ের প্রচারণা চালায়। মোবাইল ও আইএসপি অপারেটরদের কনটেন্ট সনাক্তের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন অংশীজনকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক পক্ষ থেকে জানানো যায়, সিম, জাতীয় পরিচয়পত্র ও এমএফএস অ্যাকাউন্ট এর সমন্বয় করা গেলে জুয়া, আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ ৮০ শতাংশ সমাধান করা সম্ভব।
মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা জানান, অপারেটরগুলো তাদের নিজ নিজ কারিগরি সক্ষমতা অনুযায়ী ক্ষতিকর কনটেন্ট বন্ধ করছে এবং জুয়া, পর্নোগ্রাফি বন্ধে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরো বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তারা।
সভাপতির বক্তব্যে আগত প্রতিনিধিগণকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সবার পক্ষের নীতিনির্ধারণী ও কারিগরি টিমগুলোকে সঙ্গে নিয়ে অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে শিগগির আরো কার্যকর পদেক্ষপ গ্রহণ করা হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।