যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে সিরিয়াসহ আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের জন্য পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে বলেছে, জাতীকে জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে যাচাই-বাছাই ও তথ্য আদান-প্রদানে গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি রয়েছে, এমন দেশগুলোর নাগরিকদের ওপর প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারিত ও জোরদার করতে একটি ঘোষণাপত্রে সই করেছেন ট্রাম্প।
রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবারের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ভ্রমণ নথিধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পাশাপাশি লাওস ও সিয়েরা লিওনের ওপরও এবার পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। এই দেশেগুলো আগে আংশিক বিধিনিষেধের আওতায় ছিল।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে।
সিরিয়ার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ট্রাম্প নভেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে আলোচনার পর দেশটিকে সফল করতে সহায়তার অঙ্গীকার করেছিলেন।
সাবেক আল-কায়েদা কমান্ডার আল-শারা কিছুদিন আগ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে মধ্যপন্থি নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
সিরিয়ায় সম্ভাব্য ইসলামিক স্টেটের এক হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন বেসামরিক দোভাষী নিহত হন হওয়ার পর শনিবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প ‘খুব কঠোর প্রতিশোধের’ হুঁশিয়ারি দেন।
ভিসা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থানের উচ্চ হারকে সিরিয়ার নাগরিকদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা থেকে সিরিয়া ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলেও দেশটির এখনও পাসপোর্ট ও নাগরিক নথি ইস্যুর জন্য কার্যকর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি।
এর আগে জুনে ট্রাম্প ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আরও সাতটি দেশের ক্ষেত্রে আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। সেসব নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
এ ছাড়া আরও ১৫টি দেশের ওপর আংশিক প্রবেশ-নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে নাইজেরিয়াও আছে। নভেম্বরে দেশটিতে খ্রিস্টানদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
নাইজেরিয়া সরকার বলছে, দেশটির পরিস্থিতি জটিল এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় নেওয়া উদ্যোগগুলো উপেক্ষা করে এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ট্রাম্প। বড় বড় শহরে ফেডারেল এজেন্ট মোতায়েন এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো তার নীতির অংশ।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে গত মাসে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্য গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার পর এই কঠোরতা আরও বাড়ে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী ছিলেন একজন আফগান নাগরিক, যিনি ২০২১ সালে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন।
এর কয়েকদিন পরই ট্রাম্প ‘তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ করার’ কথা বলেন। তবে তিনি কোন দেশগুলোকে সেই শ্রেণিতে ফেলছেন, তা স্পষ্ট করেননি।