উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গুম অধ্যাদেশ, হাওর সংরক্ষণ ও বার্নে দূতাবাসে তিন সিদ্ধান্ত
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তথ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতিগত ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে প্রথমেই ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি অন্যূন পাঁচ বছর ধরে গুম থাকলে এবং জীবিত ফিরে না এলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুনাল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিসাপিয়ার্ড’ বা ‘গুম’ ঘোষণা করতে পারবে। এছাড়া, সরকার মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইবুনাল’-এর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে পারবে। ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রাইবুনালে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রী বা তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের কোনো সদস্য কমিশনের পূর্বানুমতি ছাড়াই গুম হওয়া ব্যক্তির সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে ‘বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি সংরক্ষণ অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের ইকোসিস্টেম বিশ্বে বিরল ও অনন্য হলেও অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদী ও নদীপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, বিষ ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং পর্যটনের বিরূপ প্রভাবে এই ইকোসিস্টেম মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি জলাশয় সংরক্ষণে বিদ্যমান আইনি কাঠামোও অপর্যাপ্ত।
এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের দায়িত্ব, কর্তৃত্ব ও অধিক্ষেত্র সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে। হাওর ও জলাভূমির জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারির বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সংরক্ষিত হাওর ও জলাভূমি এলাকা ঘোষণা, নিষিদ্ধ কার্যক্রম নির্ধারণ, এসব কার্যক্রম সংঘটিত হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং দণ্ডের বিধান সংযোজন করা হয়েছে। হাওর ও জলাভূমি এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ব্যতিক্রম ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মতামত গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় অংশীজনদের সম্পৃক্ততা ও সংরক্ষণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে বিধি, প্রবিধান ও নির্দেশিকা প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
তৃতীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে বৈঠকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে বাংলাদেশের একটি নতুন দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর থেকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বাংলাদেশের একটি পার্মানেন্ট মিশন থাকলেও বার্নে কোনো দূতাবাস ছিল না। ফলে এতদিন জেনেভার মিশন থেকেই জাতিসংঘসংক্রান্ত ও দূতাবাসের কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী ও কৌশলগত অংশীদার হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একজন রাষ্ট্রদূত, একজন ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হবে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন অফিস রয়েছে।
বৈঠকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ জানায়, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান নিয়মিতভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তার চিকিৎসার খোঁজখবর জানাচ্ছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরে গিয়ে সরাসরি চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছেন।
এছাড়া, চলতি বছর মহান বিজয় দিবস সুন্দর ও সুচারুভাবে উদযাপনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।