ক্রীড়া ডেস্ক:
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে নেতৃত্বে প্রদানের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড দলের হয়ে সর্বাধিক টেস্ট খেলুড়ে ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছেন এলিস্টার কুক। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে ৫ দিনের এই ম্যাচটি।
ইতোমধ্যে ১০ হাজারেরও বেশী টেস্ট রান সংগ্রহ করেছেন ৩১ বছর বয়সী কুক। যে কারণে শচিন টেন্ডুলকারকে টপকে আগামীতে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে কুক নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। জেনে নিনি এই ইংলিশ টেস্ট ক্রিকেটারের ৫টি সোনালি মুহূর্ত:
অবিস্মরণীয় অভিষেক (২০০৬): ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড দলের ভারত সফরের সময় টেস্ট অভিষেক ঘটে কুকের। ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে মার্কাস ট্রেসকোথিক দেশে ফিরে গেলে আকস্মিকভাবে টেস্ট দলে ডাক পান কুক। এ সময় ইংল্যান্ড এ’ দলের সঙ্গে ক্যারিবিয় অঞ্চল সফরে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে না গিয়ে সরাসরি ভারতের নাগপুরে উড়িয়ে আনা হয় তাকে। অভিষেক ম্যাচেই তিনি ৬০ এবং অপরাজিত ১০৪ রান করে সবাইকে চমকে দেন। উইজডেনের রিপোর্টে কুক প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘পরিপূর্ণ কৌশল এবং অসাধারণ টেম্পার্টমেন্টের ’ মাধ্যমে তিনি নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে নিয়েছেন।
২০১০ সালের নভেম্বর ডিসেম্বরে ছন্দপতন: কুকের টেস্ট ক্যারিয়ারের উষা লগ্নেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইট ওয়াশ হয়ে বসে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ারর মাটিতে অনুষ্ঠিত ২০১০ অ্যাশেজ সিরিজে চির শত্রুদের কাছে ওই শোচনীয় পরাজয় কুককে সপ্ত আসমান থেকে মাটিতে নামিয়ে আনে। গাব্বায় অপরাজিত ২৩৫ রানের সংগ্রহ নিয়ে তিনি টেস্ট সিরিজ শুরু করলেও স্বাগতিকদের নৈপুন্যে তা চাপা পড়ে যায়। এ সময় তাকে বিদ্রুপ করে দ্যা সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে লেখা হয় ‘অস্ট্রেলিয়া হেভ বিন কুকড এন্ড সার্ভড আপ ফর সুপার’ অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া নৈশ ভোজের জন্য রান্না সম্পন্ন করেছে।’ এতে তেতে গিয়ে কুক দ্বিতীয় টেস্টে ১৪৮ এবং ৫ম টেস্টে ১৮৯ রান করেন। ফলে ওই সিরিজে তার ব্যাটিং গড় দাঁড়ায় ১২৭ রানের উপরে।
২০১১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ স্কোর: ২০১১ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম চার ইনিংসে কুকের সংগ্রহ ছিল সর্বমোট ২০ রান। এরপর এজবাস্টনে গিয়ে দলের প্রয়োজনে বড় সংগ্রহের প্রয়োজন হয়। এমন অবস্থায় তার কাছ থেকে খুব একটা বড় সংগ্রহ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়নি। কিন্তু সবার ধারনাকে পাল্টে দিয়ে ২৯৪ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন কুক। এটি ছিল গ্রহাম গুচের পর ইংল্যান্ডের কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে মাত্র ২১ বছর বয়সে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাকিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান গ্রাহাম গুচ। ৭৭৩ মিনিটের ওই ব্যাটিংয়ে কুক বাউন্ডারি হাকিয়েছেন ৩৩ টি। ম্যাচে সফরকারী ভারতীয়দের ইনিংস ও ২৪২ রানে পরাজিত করে। তবে ওই ম্যাচে ট্রিপল সেঞ্চুরির আক্ষেপ এখনো পুড়িয়ে মারছে কুককে। ছয় হাকিয়ে ৩০০ রানের মাইলফলেকে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন কুক। কিন্তু সেটি হতে দেননি সফরকারী ভারতীয় দলের সুরেশ রায়না। ইশান্ত শর্মার বলটি দক্ষতার সঙ্গে লুফে নেন তিনি।
গালফের বিরামহীন পথচলা (২০১৫): পাকিস্তানের বিপক্ষে আবুধাবিতে প্রথম টেস্টের শেষ দিনে নাটকীয়ভাবে জয়লাভ করে ইংল্যান্ড। আলোক সল্পতার খপ্পরে পড়া ম্যাচে জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো সফল সমাপ্তি টানলেও বিজয়ের ওই মঞ্চটি তৈরি করে দিয়েছিলেন কুক। প্রথম ইনিংসে ৮৩৫ মিনিট ক্রিজে টিকে থেকে তিনি দলীয় সংগ্রহশালায় যোগ করেন ২৬৩ রান। যেটি ছিল সময়ের বিচেনায় টেস্ট ম্যাচের ইতিহাসে তৃতীয় দীর্ঘতম ইনিংস। তার ওই অকল্পনীয় মনোযোগ সবাইকে বিমোহিত করে। ইংল্যান্ড কোচ ট্রেভর বেলিস এ সময় বলেন, ‘এত দীর্ঘ সময় মনোসংযোগ রাখাটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তার মনোযোগের দক্ষতা দুর্দান্ত।’
২০১৬ সালের মে মাসে টেন থাউজেন্ড ক্লাবের সদস্যপদ লাভ : ডারহামের রিভারসাইডে শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইল ফলক অতিক্রম করেন কুক। নুয়ান প্রদিপের বল মিড উইকেট দিয়ে সিমানা ছাড়া করে ৩১ বছর ১৬৭ দিন বয়সে নতুন এই মাইলফলক রচনা করেন কুক। সবচেয়ে কম বয়সে এই সফলতা অর্জন করেন তিনি। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান সুনিল গাভাস্কার। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে একই মাইলফলক অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়েন লিটল মাস্টার শচিন টেন্ডুলকার। গাভাস্কার কুকের প্রশংসা করে এ সময় বলেন, একমাত্র কুকই শচিনের রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারেন। কারণ তিনি বয়সে তরুণ এবং ইংল্যান্ড অন্য দেশ গুলোর তুলনায় বেশী টেস্ট ম্যাচ খেলে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম / ১৯-১০-২০১৬ ইং/মোঃ হাছিব