সুজিত চক্রবর্তী, নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তান্ডবের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। অপরাধীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। একরাতেই ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের কয়েকটি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেন। নাসিরনগর থানার ওসি তদন্ত শওকত হোসেন বলেন,এ অভিযান চলতে থাকবে। আমরা গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নেয়ার ব্যবস্থা করবো। এদিকে নাসিরনগরে পুলিশের ব্যাপক অভিযানের ঘটনায় নাসিরনগর সদর সহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতার আতংক দেখা দিয়েছে। শনিবার সকাল থেকে সদরে লোকজনের উপস্থিতি ছিলো কম। সারাদির টহল দিয়েছে বিপুল সংখ্যক বিজিবি,র্যাব ও পুলিশ। অপরদিকে এই কঠোর অবস্থানের ভেতরও নাসিরনগরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি অঞ্জন দেবের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় উপজেলা সদরের দত্তপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া উপজেলা কুন্ডা ইউনিয়নের বিটুই গ্রামের একটি মসজিদ থেকে লক্ষীমূর্তি উদ্ধার করেছে পুরিশ। শনিবার সকালে মুসল্লীরা দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।
জেলা আওয়ামীলীগ কর্তৃক নাসিরনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম,হরিপুর ইউপি আওয়ামীলীগ সভাপতি ফারুক মিয়া,চাপরতলা ইউপি আওয়ামীলীগ সভাপতি সুরুজ আলীকে বহিস্কারের ঘটনায় নাসিরনগরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় নাসিরনগরের এমপি ও মৎস্যমন্ত্রী এড.সায়েদুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,আমাকে না জানিয়ে এ বহিস্কার খুবই নিন্দনীয় ব্যাপার। আমরা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করি।
নাসিরনগরে শাহরিয়ার কবীর ও নেতৃবৃন্দ:
নাসিরনগরের তান্ডবের শিকার হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর পরিদর্শন করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা ঘুরে দেখেন। এসময় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, রামুর ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটেছে নাসিরনগরে। রামুতে প্রশাসন যতটা তৎপর ছিল এখানে তেমনটা নেই। ইতিমধ্যে স্বরাষ্টমন্ত্রী বলে দিয়েছেন নাসিরনগরে প্রশাসনের তেমন কোন গাফিলতি নেই। তাই আমরা প্রশাসনের তদন্তে ভরষা রাখতে পারিনা। আমরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। তার নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রসরাজের বাড়ি ও ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ঘটনার তিনদিন পর এলাকায় এসে যা বলেছেন তাতে ঘটনা আরো বেড়েছে। তার কথায় সংখ্যালঘুরা আশ্বস্ত হতে পারেনি। মানুষ মহাজোট সরকারের আমলে এমন ঘটনা দেখতে চায়না। মানুষ নিরাপত্তা চায়, আশ্বাস চায়। কিন্তু প্রশাসন তাদের সেই নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রসরাজের বাড়িতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি সে স্বল্প শিক্ষিত। ফলে রসরাজের ফটোশপে ছবি এডিট করা সম্ভব নয়। তার বাড়িঘর দেখে আমাদের মনে হয়েছে সে সংস্কৃতি মনস্ক মানুষ। সে এমন কাজ করতে পারেনা। তার সাথে ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক,একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, জেলা সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
নাসিরনগরে সাংবাদিকদের প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান:
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহামেদ বলেছেন,নাসিরনগরে অনেকে আপনাদের বিভ্রান্ত করতে পারে। কিন্তু আপনারা তাতে বিভ্রান্ত হবেননা। কারো ডিকটেশনে নয়, নিজের বিবেকের সাথে কাজ করুণ। এখানকার পজেটিভ সংবাদগুলো তুলে ধরুন। জেলার নাসিরনগরে তান্ডবের ঘটনা পরিদর্শন শনিবার শেষে বিকেলে গৌরনদী মন্দিরে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়কে বাঁধাগ্রস্ত করতে একটি পক্ষ এমন কাজ করছে। বাংলাদেশকে অশান্ত করার চক্রান্ত এই হামলা। তবে সাম্প্রদায়িক শক্তি এদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য নষ্ট করতে পারবেনা। শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ, পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় তারা ঠিক থাকতে পারছেনা। ফলে এবার তারা নাসিরনগরকে টার্গেট করেছে। এসময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে সাহস রাখতে বলেন। এবং সরকার তাদের পাশে আছে বলে জানান। এময় তার সাথে প্রেস কাউন্সিলের সচিব শ্যামুল কুমার কর্মকার, সিনিয়র সাংবাদিক আকরাশ হুসেন খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০৫-১১-২০১৬ইং/ অর্থ