শফিক কবির, স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সনাতন ধর্মাবলম্বী ও পুরোহিতদের করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় করলেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো: আক্তার জামীল। গত ১৯ নভেম্বর ২০১৬ খ্রি. তারিখ শুক্রবার বিকাল ৫:০০ টায় সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের সিদ্বেশ্বরী কালি বাড়ি মন্দিরে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিষয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী ও পুরোহিতদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর ট্রাস্টি রিপন রায় লিপু। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক মাখন চন্দ্র দেবনাথ, সিদ্বেশ্বরী কালি বাড়ি মন্দিরের উপদেষ্টা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পীযুষ কান্তি সরকার, যশোদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার রায়, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার দে প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এডিসি জেনারেল বলেন, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে এবং সে লক্ষে আইন প্রয়োগসহ জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী ও পুরোহিতদের সাথে আজকের এ মতবিনিময় সে ধারাবাহিক কর্মসূচিরই একটি অংশ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এডিসি জেনারেল উপস্থিত সকলকে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পুরোহিত এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারেন সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, একটি সুস্থ জাতি পেতে প্রয়োজন একজন শিক্ষিত মা, বলেছিলেন প্রখ্যাত মনিষী ও দার্শনিক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। অথচ আজ এই একুশ শতকে এসেও বাংলাদেশের ৬৬% মেয়ে এখনো শিক্ষা থেকে বি ত, যার প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে বাল্য বিবাহ একটি বড় বাধা। যারা বাল্য বিবাহে ইচ্ছুক তারা যে কোন উপায়ে জন্ম নিবন্ধনে মেয়ের বয়স টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধি করে নেয় যা অনৈতিক। এক্ষেত্রে কিছু কাজী ও পুরোহিতও দায়ী থাকে এবং এরা মেয়ের বয়স বৃদ্ধি দেখিয়ে বিয়ে দিতে বর এবং কনে পক্ষকে সহায়তা করে। এছাড়া, মেয়েদের অর্থনৈতিক অবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাল্যবিবাহে উৎসাহিত করে ছেলেদের পরিবারও। নারী শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহের কারনে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ মা হতে গিয়ে প্রতি ২০ মিনিটে একজন মা মারা যাচ্ছেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে৷ বাল্য বিবাহের ফলে অপরিণত বাড়ন্ত পুষ্ঠিহীন শরীরে বেড়ে ওঠে আরেকটি অনাগত ভবিষ্যত অপুষ্ঠিগত অভিশাপের বোঝা নিয়ে। বেড়ে চলে মা ও নবাগত শিশুর জীবনের ঝুঁকি। বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরী হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়৷ স্বামী, সংসার, শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে বুঝে উঠার আগেই সংসার এবং পরিবারের ভারে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির থেকেও তার উপর চাপের সৃষ্টি হয়, শুরু হয় অশান্তি, পারিবারিক কলহ, এবং সর্বোপরি পারিবারিক নির্যাতন। বাল্যবিবাহ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না, পারিবারিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনেও সহায়ক হয়। উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন আমরা সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাল্যবিবাহের কুফল ও প্রতিরোধকল্পে সচেতন হই ও এর প্রতিরোধে এগিয়ে আসি তাহলে শীঘ্রই আমরা এ সামাজিক অবক্ষয় হতে মুক্তি পাব। একটি সুন্দর, সুস্থ সমাজ রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে সকলকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
পরে উপস্থিত সকলে হাত তুলে বাল্যবিবাহ রোধসহ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। আলোচনা শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে প্রধান অতিথি প্রসাদ তুলে দেন।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/১৯-১১-২০১৬ইং/অর্থ