মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ রিপোর্ট,
চলতি বছরে দুনিয়াজুড়ে সার্বিকভাবে হিংসা ও হানাহানি বেড়েছে। অঞ্চলভিত্তিতে এশিয়া তুলনামূলক বেশি অশান্ত হলেও, ইউরোপের দেশগুলোতে শান্তির আভাস দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির মতো যেসব দেশ বিশ্বশান্তি নিয়ে সবসময় সরব, তারাও শান্তি স্থাপনে বেশ পিছিয়ে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস (আইইপি) প্রকাশিত বিশ্ব শান্তি সূচক- ২০১৬ তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
বিশ্বের মোট ১৬৩টি দেশে বছরজুড়ে সমীক্ষা চালিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক এ সংস্থা। সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে দেশটির সাথে বাকিদের দ্বন্দ্ব, সামরিকীকরণের প্রভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এরকম বেশ কয়েকটি মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে এ সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এবার নিয়ে টানা দশমবারের মতো বিশ্বশান্তি সূচক প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
সূচক অনুযায়ী, শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় দেখা গেছে বরাবরের মতো ইউরোপের দেশগুলোর জয়জয়কার। শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে সাতটিই ইউরোপের। এশিয়ার মাত্র একটি দেশ সেরা দশের তালিকায় জায়গা পেয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে আইসল্যান্ড। এর পরপরই আছে ডেনমার্ক (২য়) ও অস্ট্রিয়া (৩য়)। চতুর্থ অবস্থানে আছে প্রশান্ত মহসাগরীয় দেশ নিউজিল্যান্ড। এরপরের তিনটি অবস্থান দখলে নিয়েছে ইউরোপ। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অবস্থানে আছে যথাক্রমে পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, সুইজারল্যান্ড। অষ্টম স্থানে আছে জাস্টিন ট্রুডোর দেশ কানাডা, নবম স্থানে এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি জাপান। দশম স্থানে আছে ইউরোপীয় দেশ স্লোভেনিয়া।
অন্যদিকে বিশ্বে সংঘাতপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় এগিয়ে আছে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ। এ তালিকায় শীর্ষ দশের পাঁচটি দেশই আফ্রিকা মহাদেশের। চারটি এশিয়ার আর মাত্র একটি ইউরোপের দেশ।
বিশ্বের সংঘাতপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নাম। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আফ্রিকার নবীন ও দরিদ্র দেশ দক্ষিণ সুদান। এর পরের অবস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাক (৩য়), আফগানিস্তান (৪র্থ), সোমালিয়া (৫ম), ইয়েমেন (৬ষ্ঠ) ও মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র (৭ম)। ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে দশের মধ্যে জায়গা পেয়েছে ইউক্রেন (৮ম)। আফ্রিকার দেশ সুদান নবম এবং লিবিয়া দশম অবস্থানে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানির মতো বেশ কিছু দেশ বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে সবসময় সরব। কিন্তু এ সূচকে দেশগুলোর অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। ১৬৩টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১০৩ নম্বরে। আর চীন রয়েছে ১২০তম অবস্থানে। সেই হিসেবে শরণার্থীর চাপে থাকা জার্মানি তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় তালিকায় দেশটির অবস্থান ১৬। ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড ১১তম অবস্থানে রয়েছে। স্পেন ২৫তম, ফ্রান্স ৪৬তম আর ব্রিটেন ৪৭তম অবস্থানে রয়েছে।
সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান তলানিতে। এসব দেশের মধ্যে একমাত্র ভূটান ১৩তম অবস্থান নিয়ে সামনের দিকে রয়েছে। নেপালের অবস্থান ৭৮। ভারত ১৪৩তম অবস্থানে রয়েছে। পাকিস্তান ১৬৩টি দেশের মধ্যে ১৫৩তম অবস্থানে রয়েছে। সে হিসেবে দেশটি বিশ্বের ১১তম সংঘাতপ্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তকমা পেয়েছে।
এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এ অবস্থান ভূটান ও নেপালের পরেই। তাই বলা যায়, শান্তির নিরিখে আফগানিস্তান ছাড়াও প্রতিবেশী পাকিস্তান ও ভারতের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে বাংলাদেশ।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/ ২১-১১-২০১৬ ইং / মো: হাছিব